বৃষ্টি, আহা বৃষ্টি!

 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ঢাকা-সিলেটসহ সারাদেশে বৃষ্টির খই ফুটছে। আজ সারাদিন ঘরবন্দী ছিলাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে অথবা বসাবস্থায় সারাদিন বৃষ্টির অঝোর বর্ষণ দেখেছি। ছুটির দিনের বৃষ্টিধারা খারাপ লাগেনা প্রমাণ পেলাম আজ আবারো। সারাদিন কাজ ছিল না বলেই মনে হয় ওমন অনুভূতির জন্ম নিয়েছিল। বৃষ্টি, বৃষ্টি, সে কী মোহময় বৃষ্টি!
 
কাল কাজ ছিল বৃষ্টিও ছিল গুটি গুটি হয়তো। সকাল হলে কাজ ফাঁকি দেবার একটা নাযায়েজ ইচ্ছে জেগেছিল মনে কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিই। কী ছুটি নেয়া যায়, ভাবলাম। অসুস্থতা না বার্ষিক ছুটি না কী বৃষ্টিছুটি! নাহ্ বৃষ্টি ছুটি বলে কর্পোরেট কালচারে কোন শব্দের অস্তিত্ব নেই বলে ছুটি নেয়া হয়নি! তাই আধখানা কাকভেজার আগেকার অবস্থা নিয়ে অফিস ঢুকেছিলাম আধঘন্টার পর! তারপর বৃষ্টি দেখা হয়নি। মাঝে মাঝে আমাকে সিগারেটদোকানী তার পসরা দিয়ে আমাকে ডাকলে আমি বেরিয়ে এসে দেখতাম রাস্তাঘাট মোটামোটি ভেজা ভেজা। তাই দিনশেষে যখন ভেজা রাস্তার খানিকটা রূপ দেখেছিলাম কিন্তু তার কার্যকারণ দেখা হয়ে উঠেনি।
 
বৃষ্টি মেয়েদের নাম। হতে পারে এ কারণেই এর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক চিরায়ত। কোন কোন বৃষ্টি আমাদের বেকায়দায় ফেলে দিলেও বৃষ্টিবিমূখ অনেককেই বলতে শুনেছি বৃষ্টির গুণকীর্তন করে যেতে। তার কারণ আমি জানি না আর কোনোদিনও ভাবতে শিখিনি এই সময়ে। তবু বৃষ্টি যে এক চিরায়ত সৌন্দর্যের রূপ তা ভাবতে শিখে গেছি। তাই বারবার বৃষ্টি আমাকে আশাবাদী হতে বলে। খানিক বিরক্তিকে একনিমিষেই সরিয়ে দেয় দূর থেকে দূরে!
 
আজ কাজ ছিলনা বলে বৃষ্টি ছিল। আজ বৃষ্টি ছিল বলে কাজ ছিলনা। ঘটনা যাই হোক আজ সারাদিনের বৃষ্টিবন্দীত্ব উপভোগই করেছি। আমার জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে যা দেখেছি তা আমার একান্ত সময়ের। হয়তো সে সময় ভাষাজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কাছে হা মেনেছে তার প্রকাশ। তাই বলতে পারছি না কেমন ছিল সে সময়কার অনুভূতি। বৃষ্টি যখন অঝোরে ঝরছিল পাশের বিল্ডিংয়ের উপর অথবা পাশের রাস্তার উপরে তখনকার সময়ের যে অপূর্ব শব্দ ঝংকার ভেসেছিল বাতাসে অথবা বারবার এসে হানা দিচ্ছিল আমার চোখ-কান হয়ে হৃদয় অলিন্দ্যে তা শুধু বর্ণনা দেবার দাবী রাখতে পারে আমাদের অগ্রন্থিত কথামালা। বৃষ্টির শব্দ ঝংকারগুলোতে মনে হচ্ছিলো আমার মনের ভেতর থেকে অবিরত ঝরছে। তাই সারাদিন আমাকে বন্দীত্বদশায় বেধে রাখলেও আমি মাঝে মাঝে চাইবো এই বন্দীত্বকাল। আমার উপভোগের সময়টা আমি আজ মনে গেঁথে রেখেছি একান্ত করে যার অনুরণন হচ্ছে এখনো।
 
এখন বৃষ্টি নাই কিন্তু তার রেশ রয়ে গেছে এখনো। পথ-ঘাট যতই বৃষ্টির অবশেষ নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকুক না কেন ভেজা কাকের মতো আমি কান পেতে অনুভব করছি সারাদিনকার বৃষ্টি মোহময় ঝংকার!
 
বৃষ্টি, বৃষ্টি তোমার মোহময়তার কাছে আমি বন্দী কোনো এক!

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।