কবিতা

 চল বৃষ্টি নামাই! 

 

এই ক'দিনে বেশ খানিকটা হাঁপিয়ে উঠেছি। মনে হচ্ছে কয়েক হাজার বছর ধরে বৃষ্টির মুখ দেখিনা। এমন মনে হয়নি আগে কখনো। কারণ এর আগে এভাবে বৃষ্টিবিহীন এভাবে থাকা হয়নি। চাতকরূপী প্রতীক্ষা; উফ, কী অসহ্য! তাই এই নির্জলা দিনে মাঝে মাঝে নিজের কাছেও চাওয়া হয়- আমাকে এক পশলা মাত্র বৃষ্টি দাও!

 
কাল সকালে আকাশের গোমরামুখ দেখে ভাল লেগেছিল। মনে হয়েছিল এবার নিশ্চয়ই প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। রীতিমত ব্যস্ত হয়ে বের হয়ে গিয়েছিলাম অফিসের দিকে। পাছে বৃষ্টিতে না আটকাই! কিন্তু সে রকম কিছু হয়নি। আকাশ তার মত করে পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি সেভাবে আসেনি। যে দুয়েক ফোঁটা নেমেছিল তাতে করে ঢাকার রাস্তার পাশের কোন গাছের গাছের ডালে বসা কাকেরও ভেজা হয়ে উঠেনি। মন খারাপ করেছিলাম কিছু সময়ের জন্যে। এত চাওয়ার বৃষ্টি আসেনি কেন এই ভেবে!
 
আমার বাসার দক্ষিণে পুরোটা খোলা। সে পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই স্বরে বাতাস ঢুকে ঘরের মাঝে। একবার সে খোলা জায়গা দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে আমার একটা ল্যাপ্টপ নষ্ট করে দিয়েছিল। এর পর থেকে মোটামোটি বৃষ্টির সময়ে সে জানালা বন্ধ করে দিই। পাছে আবারো পানি ঢুকে অন্যকিছু নষ্ট করে দেয়! অথচ কাল সকালে আমি জানালা বন্ধ করিনি কারণ আমি তখন বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছি। মনে হয়েছিল জানালা বন্ধ দেখে বৃষ্টি যদি না নামে! অথচ কী আশ্চর্য্য, বৃষ্টিকে এমন সম্মানের পরও সে নামেনি অঝোর ধারায়! 
 
যে তীব্র গরমে সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে ক্রমাগত আমিও তার বাইরে থাকতে পারিনি অদ্যাবধি। তাই আগেকার দিনের মত আরেকবার গ্রামে গ্রামে গিয়ে গাঁয়ে কাদা মেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল-ধান তুলে বৃষ্টির প্রার্থনায় নেমে যেতে খুব মন চাইছে। একটাই চাওয়া; তবু যদি বৃষ্টি নামে!  আজ একমনে প্রার্থনায় বসে যেতে মন চাইছে বৃষ্টি নামুক; শীতল হোক এ ভূধারা! বৃষ্টি তোমাকে চাইছি খুব করে। একবার শুধু আরেকবার নামো অঝোর ধারায়! আমি আজ প্রাণে প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে বলতে চাইছি চল বৃষ্টি নামাই! 
 
 
বৃষ্টি 
কোন এক বৃষ্টিবিকেলে যদি আকাশের দিকে যাই
তবে মাটির সমতলপট গোমড়ামুখো হয়
বার কয়েক দৃষ্টি বিনিময়ে আপাত সম্মোহিতভাব
মিইয়ে আসে আচমকা বিসম্বাদে।
বিসম্বাদের ঝড় আহা, আহা বৃষ্টিবিকেল
আমাকে দেখিয়ে দেয় পাহাড়ীপথ-
আমার আশ্রয়স্থল একদিন দেখিয়ে দিয়েছিল
এক উদ্ভ্রান্ত শালিক ভোরবিহানে
আমি শালিকের পাখা দেখেছি খানিক ইশারাসদৃশ
বাকিটা আড়াল ছিল বায়বীয় বাতাসে।
 
জানি, জানি এবং জানি এ পথে বাতাসের তোড়
উল্টোপথেও উল্টোসুর-
তবু সব পথেই আজ বৃষ্টির দেখা
তাই আমি আজ বৃষ্টি ছুবো,
প্রিয় বৃষ্টি, আমাকে আজ ছুঁয়ে যাও তোমার প্রাণসখা ভেবে।
 
 
 
পাপ 
বৃষ্টি দেখি চোখে চোখে তাই সাধ হয়
একদিন বৃষ্টি হই, একদিন বৃষ্টি হয়ে জড়িয়ে নিই তোমায়
গা ছমছম বৃষ্টি, শ্বেত শুভ্র বৃষ্টি
বৃষ্টি হবো তাই বৃষ্টি মাঝে নিজেকে জড়িয়েছি আগাগোড়া।
 
তার চোখে চোখ রেখে একদিন বলেছিলাম
এসো বৃষ্টি নামাই, এসো বৃষ্টি হই-
সে কিছু বলেনি শুধু অবাক বিস্ময় তাড়া করছিলো তার চোখ
আমি বুঝে নিয়েছিলাম তার চোখভাষা
তাই শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি নামানো হয়ে উঠেনি
হয়ে উঠেনি বৃষ্টি অথবা তার আগেকার বিমূর্ত মেঘ!
 
সে কানে কানে বলেছিলো এ পাপ, জন্মের পাপ
অকালে বৃষ্টি হতে নেই-
আমি পাপের পথে পা দিতে বলি তবে কী পাপরাজ্যে আকাশের বাস
আমার অবাক চোখ আকাশ মাঝে খুজে পাপচিহ্ন।
পাপ, পাপ, অনেক পাপ, হাওয়ায় ভাসে পাপ
আমি পাপে পাপ খুঁজি হয়ে যাই পাপে একেশ্বর
 
অথচ দিনশেষে দেখি আকাশে কোন পাপ নেই-
 
আমি কেন তবে হবো পাপের ধারক!
 
 
রাতভর বৃষ্টি শেষে ভোরে এসেও দেখা মেলেনি খানিক সূর্যের
নদীতীরবর্তীজন নদীকে ভাবে আড়ষ্ট আয়না বলে
ফি-দিন গোসলের আগে দেখে নেয় আপনার মুখ
এপাশ-ওপাশ করে ভ্রুকুটি ছুঁড়ে যেন পূর্বপুরুষের দায়
পূর্বপুরুষ উত্তরপুরুষে এসে থামে উত্তরপুরুষ ধায় আরো উত্তরে
বংশানুক্রমিক ধারায় স্বরূপে ফেরে সিগমুন্ড ফ্রয়েড
কেউ কেউ ভাবে অথবা ভাবেনি পৌণে ষোলআনাজন।
দিন দিন দিনশেষে যখন রাত নামে
তখন রাতের গতর ছুঁয়ে যায় অশেষ ওম
একঝাঁক পায়রা ওড়ে আকাশে পরিকল্পনা ছাড়াই
কদাচ জোনাকপোকাদের স্বর্গরাজ্যে হানা দেয় বিপন্ন প্রজাতি এক
আমাকে কোন কোন দিন উদ্বোধনের নেমন্ত্রণ জানায়
আমি পথে নেমে পথ হাতড়াই ফি দিন পৌণঃপূনিক!
একদিন ভালোবাসা প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলাম কোন এক শালিকের কাছে
শালিকটা আজন্ম বোকা এক, দেখায় গোলাপকে
গোলাপ দেখায় ঝরে যাওয়া পাপড়িমালা
ও আবার কানে কানে বলে মাটির কথা
মাটির চোখ আকাশে; আকাশের অন্য কোনজন
আমি বুঝে যাই সব, ফিরে আসি নিজেতে
নিজকে বলি উত্তর চাই অথচ বোবা নিরুত্তর সব
জানা হয়না কোন দিন ভালোবাসার সংজ্ঞা।
তখনো অপেক্ষায় ছিলাম খুব, তুমি ছিলে আত্মবিসর্জনপর্বে
রূপবদল খেলায় মজিনি বলে বুঝিনি আগাগোড়া
আর বাহুসংলগ্নাজন আঁড়চোখে দেখে গতিবিধি,
তুমি দেখেছো সেদিন রাতভর বৃষ্টি, জলঢাকা গতর
আমি ছুঁয়ে যাই তোমার হৃদয় অলিন্দ্য পোড়ামুখি সেজে,
পথে পথে পথ মেপে সূর্যের দেখা পাবো বলে
রাতভর বৃষ্টি শেষে ভোরে এসেও দেখা মেলেনি খানিক সূর্যের
 
এদিকে তোমার কথা ভাবার কালে আমি হয়ে যাই দূর্ধর্ষ মৌলবাদি এক!
 
 
 


whole e book.pdf (1,7 MB)

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।