বিশ্ব কবিতা দিবসে এক কবিতা পাঠকের অনুভূতি

বিশ্ব কবিতা দিবসে এক কবিতা পাঠকের অনুভূতি

 

২১ মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস। বিভিন্ন মাধ্যমে দেখার আগে জানতামই না বিশ্ব কবিতা দিবস বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে। এও জানলাম এ দিবস নাকি ক’বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিতও হচ্ছে! না জানাটা হতে পারে আমার ব্যর্থতা! তবে এ ব্যর্থতায় যে খুব বেশি অখুশি তা কিন্তু নয়! এর অর্থ এই নয় যে আমি কবিতা সম্পর্কে আগ্রহী না। প্রকৃতভাবে কবিতার একজন পাঠক হিসেবে এ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আমার খুব বেশি ভাবনা নাই। তবে প্রসংক্রমে টুকরো কিছু জিজ্ঞাসা আছে!
 
বিশ্ব কবিতা দিবস সম্পর্কে জানার পরে গুগলে বিশ্ব কবিতা দিবস লিখে সার্চ দিলাম। পেয়ে গেলাম অনেকগুলো লিংক। এর মধ্যে একটি রয়েছে উইকিপিডিয়ার। সেখানে যা লিখা আছে তা সরাসরি তুলে দিচ্ছি: ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ মার্চ তারিখটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা, প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। ইউনেস্কোর অধিবেশনে এই দিবস ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল, “এই দিবস বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কবিতা আন্দোলনগুলিকে নতুন করে স্বীকৃতি ও গতি দান করবে।”
 
পূর্বে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হত। প্রথম দিকে কখনও কখনও ৫ অক্টোবর এই উৎসব পালিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট অগস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে ১৫ অক্টোবর এই দিবস পালনের প্রথা শুরু হয়। অনেক দেশে আজও অক্টোবর মাসের কোনো দিন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের বিকল্প হিসেবে অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসের কোনো দিন কবিতা দিবস পালনেরও প্রথা বিদ্যমান।
 
দেখা যাচ্ছে এই কবিতা দিবসের ধারনাটি খুব বেশি দিন আগের নয়। এই দিবস ঘোষণার বয়স মাত্র ১৩ বছর। প্রশ্ন জাগতে পারে এর আগে কি কবিতা লিখা হয়নি অথবা কেউ কবিতা লিখাকে উৎসাহ দেয়নি। অতি অবাক করার মতোই ভাবনা। ইউনেস্কো এ দিবস পালনের উদ্দেশ্যে বলেছিল কবিতা পাঠ, পাঠ, রচনা, প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্যে এই দিবসের সূচনা করেছে। কবিতা রচনার উদ্দেশ্যের জন্যে কবিতা দিবসের সূচনা অতি হাস্যকর। হেসে গড়াগড়ি খাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকেনা।
 
এমন অনেক দিবস আছে যা আসলে কোন তাতপর্য বহন করে বলে আমার খুব বেশি ধারণা নাই। আমি মাঝে মাঝে হাসি একটি দিবসের নাম শুনে “বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস”! কী অবাক করা ব্যাপার হাত ধূতে উৎসাহ দেবার জন্যে একটি দিবস! হতে পারে এর অনেক গভির কোন তাতপর্য আছে! এমনই মনে হয় কবিতা দিবসের কথা ভেবে। অনেক কবি হয়তো আমার এসব কথা দেখে আমাকে দোষারোপ করতে পারেন! কিন্তু যদি কবি এবং যিনি আমাকে দোষারোপ করছেন/করবেন তিনিও কী এই দিবসের কথা ভেবে কবিতা লিখে থাকেন। হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে এমন অনেক দিবস আছে যা আমাদের প্রেরণা আর চেতনার অংশ সেসব দিবস বছরে একবার আসে তবু কী আমরা ভুলে যাই? সারা বছর কী আমরা ধারণ করিনা? হ্যা, আমরা সেসব চেতনাকে ধারণ করি কিন্তু সেগুলো বাস্তবিক অর্থে কবিতার মত মনের একান্ত সৃজনশীলতার মাধ্যমে প্রকাশের সুযোগ কতটা আছে সেটাও বিবেচনায় নেয়া দরকার বৈকি! তবে কিছু জাতীয় দিবসের কথা আলাদা। রাষ্ট্র যা নির্ধারণ করে দেয় অথবা সময়ের প্রয়োজনে নির্ধারিত হয়। কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে এমন দিবসের ঝাণ্ডা ঝুলিয়ে দেয়া কতটা যৌক্তিকতার মানদণ্ডে যৌক্তিক তারচেয়ে অনেক বেশি হাসির খোরাকই যোগাচ্ছে। আর দিবস পালনের উদ্দেশ্যের সাথে যদি জুড়ে দেয়া হয় কবিতা রচনায় উৎসাহ প্রদান তাহলে ত প্রশ্ন উঠাটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়!
 
কবিতা দিবস ছাড়াও আমরা যারা কবিতার পাঠক হিসেবে আছি তাদের কাছে কবিতার আবেদন অনেক বেশি। সৃজনশীল মনের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ যদি কবিতা হয়ে থাকে তাহলে এর রচনার জন্যে কোন দিবসের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না!
 
প্রজাপতি
 
তোমাদের নিস্তরঙ্গ বাগানে একটা প্রজাপতি ওড়েছিল
জেনেছিলাম তার আজন্ম সাধ ছিল পাখা গজাবার
আপনার পাখা ছিলনা বলে-
বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোন এক ডানার আশায়
প্রজাপতি হয়েছিল সে তার জন্মাবার কালে
আমৃত্যু থেকেছিল আবার প্রজাপতি হয়েই
প্রজাপতি,প্রজাপতি হরেক প্রজাপতি তবু অচেনা কোনজন।
 
একদিন খুব ভোরে একটা ফুল তুলেছিলাম
ফুলটা অজানিত কোনো গন্ধমাখা; বুঁনো গন্ধ
আমার নাকে-মুখে কী বিষম অনুভুতি
সারা পাড়া লাইন ধরেছিল পিছু পিছু
আমি পাড়াকে নিয়ে গিয়েছিলাম আর এক পাড়ার কাছে
পাড়া পাড়া কাছে আসে, জানতে চায় পূর্বাপর
আমি তাদের মাঝপথে রেখে কেটে পড়ি আপনার পথে।
 
অদ্য দুপুরে কোন এক নিস্তরঙ্গ কাক আমাকে দেখেছিল
আতিথেয়তার মালা পরিয়ে দেবার কালে আমি দেখিয়েছি ব্যস্ততা
আমার ব্যস্ততা ত্রস্ত পায়ে হাটে, কাটে না, তবু
আমার সামনে জ্বলজ্বলে ভেসেছিল আমার পূর্বপুরুষ
আমি তাদের শুধাই আমার জন্মক্ষণ আর ইতিহাস
তার বলে না কিছু, শূধু হাসে, হাসাটাই ধর্ম বলে
অথচ সে-ই আবার আমায় কোনোকালে বলেছিল
একদিন ইতিহাসের মাঝনদীতে সাতার শেখাবে
আমি উন্মুখ ছিলাম বলে নিজ় থেকে সাতার শিখিনি এতোদিনেও।
 
আমরা আমাদের কাল প্রজাপতির কাছে বন্ধক রেখেছিলাম একদিন
দেনা শোধের কথা ছিল আগাগোড়া অথচ তার ধারে-কাছে যাইনি
ফলত প্রজাপতি প্রজাপতি হয়। বেড়ে চলে খতিয়ান
হালখাতার কাল সামনে আসে, আমি ভুলে চলি আমাকে
ব্যস্ততাকে সামনে নিয়ে বসি, নিজেকে ভুলার প্রকৃত দাওয়াই
আমি সব ভুলে যাই, সব ভুলে যায় সমূহ ধার-দেনা
আমি আমাকে ভুলে গেলে প্রজাপতিটাও আমার নাম লিখে
                                                অনিঃশেষ খেরোখাতায়!

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।