আজ থাকনা আকাশ সারাদিন মেঘে মেঘে!

 

বৃষ্টি নামবে বলে মেঘ করেছে আকাশে। মেঘের পরে মেঘ তাই আকাশের মন ভার এখন। আকাশের দিকে তাকালে তার গোমরামুখো ভাব চোখে পড়ে খুব করে। 
 
এই শরতে কাশবনে কাশ ফুটেছে। এই শহুরে সভ্যতায় কাশ দেখতে ভাগ্যের কাছে হাত পাততে হয়। ভাগ্যই চেয়ে দেখেনা কীসের লোভে বাড়িয়ে ধরা এই হাত। তাই তার বিকারও নাই কোনো! তাই কাশের লোভকে সংবরণ করতেই হয়। দেয়ালে টানানো কোনো ক্যালেন্ডারের ফাঁকে অথবা গুগল অথবা অন্য কোন মাধ্যম যেখানে কাশবনের ছবি ঠাঁয় হয়ে থাকে আমরণ সেখানে যদি দেখা যায় তবেই হলো। এছাড়া আর উপায় কী!
 
আজ শহুরে সভ্যতার অলি-গলি পেরুতে গিয়ে কোথাও দেখা হয়ে উঠেনা/উঠেনি অনেকদিন কাশবন। তাই মাধ্যমের পর মাধ্যম ঘুরে এসে এখন যখন আমার চোখ আকাশের দিকে ঠাঁয় তখনই খেয়াল করি আকাশে আজ কাশবনের মেলা বসেছে। এ কাশবন মেঘরূপী কোনো এক! এথায়-সেথায় থোঁকা থোঁকা হয়ে ফুটে আছে ঠিক ঠিক আমার মনের মতোই!
 
আমার জন্ম যেখানে হয়েছিল সেটা ছিল একটা গ্রাম। কিন্তু সে গ্রামে কোনোদিন কাশবনের নজির আমি দেখিনি। গ্রামের সবাই যত্ন করে পরিস্কার করে রাখতো চারপাশ তাই এসবের অস্তিত্ব ছিল অস্তিত্বহীন। কিন্তু যখনই একটু বড় হওয়া শিখে গিয়েছিলাম তখনই তখন হয়তো পাঠ্যবইয়ে কাশবনের উপস্থিতির সাথে পরিচিত হয়ে একদিন ঠিক ঠিকই কাশবন আবিস্কারে দিয়েছিলাম। তখন যে কাশবন ছিল আমার কাছে বিস্ময়ের অপর নাম সেটা আমি নিজ হাতে ছুয়ে দেখেছি। কী অপার শুভ্রতা ছিল তার আস্ট্রেপৃষ্টে। আমি তার কাছ থেকে কিছুটা শুভ্রতা ধার নিয়েছিলাম মনে মনে তাই আমার মন তখন শুভ্রতার শুভ্রানন্দে মেতেছিলো। সেই ছিল প্রথম তারপর আরো কয়েকবার কাশবন হয়ে কাশফুলের কাছাকাছি যাবার সুযোগ হয়েছিলো।
 
এখন বই পড়া সেই কাশবনের ছবি শুধু ছবিপটেই আঁকা থেকে যায়। হারিয়ে যাবার পথে বসেছে আমাদের কাশবন! কাশবন শন শন এখন আর বাস্তবে বাজে না স্থান করে নিয়েছে বইয়ের পাতা অথবা বয়েসীজনের স্মৃতিকোঠায়।
 
বলছিলাম, মেঘের কথা। আকাশের আজ গুমরোমুখো ভাব। আমি নিশ্চলনেত্রে তাকিয়ে দেখি আকাশে আজ কাশবনের পসরা বসেছে। একেকটা মেঘপিন্ড যেন থোঁকা থোঁকা কাশবন। যদিও তার মাঝে কোন শন শন ধ্বনী নেই তবু মুগ্ধ হয়ে যায় চোখ-দু’চোখ। চোখ থেকে মন। এ এক অবর্ণনীয়ক্ষণ। মনে হচ্ছে একটা চিঠি লিখি তার কাছে। তার কাছে যাবার আকুতি নিয়ে খোলা চিঠি।
 
মেঘমুক্ত আকাশ দেখতে সবাই ভালোবাসে। আমিও আকাশকে দেখতে চাই মেঘমুক্ত কিন্তু কেন জানি আজ মেঘযুক্ত আকাশ আমার কাছে অসম্ভব ভালোলাগা নিয়ে হাজির হয়েছে। যদিও তার মন ভার তবুও! আমি আজ দিনভর আকাশকে দেখতে চাই মেঘযুক্ত কোনো এক। কারণ আমি জেনে গেছি মাটির কাশবন তার স্বরূপ নিয়ে আজ নিজেকে স্থানান্তর করেছে আকাশে। তাই আকাশে আজ পেঁজাতুলো মেঘের বদলে দিগ্বিদিক কাশবনের অস্তিত্ব! 
 
আজ আকাশে সকাল হতেই মেঘ-সূর্যের দ্বৈরথ চলছে। কেউ কাউকে হারাতে পারেনি এখনো কিন্তু এ পর্যন্ত মেঘের অস্তিত্বই প্রমাণ করে মেঘ হারেনি অদ্যাবধি। আমি আজ মেঘের জয়রথ দেখতে চাইছি পূরোদিন সাথে সাথে কাশবনেরও!
 
মেঘ মেঘ আকাশ আর কাশবনের আকাশ আমার অন্তরে স্থান করেছে আজ। আমি শুনতে পাচ্ছি তার মিহিস্বর! যে তুমি আকাশ দেখতে যাচ্ছো ঠিক এখন তুমি কী শূনতে পাও আমার আর আকাশের সেই সুর যার পূরোটা জুড়ে আছে মেঘ আর কাশবনের নির্ভেজাল সম্মিলন!

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।