চিঠি

14/07/2012 13:36

 

সম্বোধনটা সেভাবে করতে পারছিনা বলে দুঃখ নিও না। আমি আসলে এমনই যে সম্ভোধনের ভাষাজ্ঞান মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি। এ আমার ইচ্ছাকৃত কোন ভুল নয়; চিরায়ত বাহ্যিক প্রকাশই বলতে পারো। তবে যখন লিখছি মনে রেখো আমার ভেতর দিয়ে সম্ভোধনের একটা হিমধারা বয়ে যাচ্ছে। জানি এর প্রকাশভঙ্গি তোমার ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু আমার কাছে আরাধ্য বর্ণসমষ্টি বলে মনে হচ্ছে তাই কিছু লিখছিনা পাছে একটু হলেও লজ্জ্বা পেয়ে যাও তুমি তোমার একান্ত সময়ে নিজের কাছেই! তবে জেনে রেখো, একদিন মনে হবে আমি সম্ভোধনহীন চিঠি লিখে আমি ভুল করিনি। কারণ কোন এক আকর্ষণ নিয়ে এ সম্ভোধন জায়গাটায় তুমি বারে বারে চোখ রাখবে। যদি তখন তোমার ঠোঁটের কোণ দিয়ে একটুখানি হলেও হাসি ঝরে আমার পাওয়া হয়ে যাবে অনেক কিছুই!
 
কেমন যাচ্ছে আজকাল?
 
তুমি জানতে চাওয়ার আগেই বলে দিই আমার সময়টা কেটে যাচ্ছে বেখেয়ালে। জানিনা কী করে প্রতিদিনই ভোর হয় আর কেনই বা হয় তার হিসেব নিতে পারিনি কোনদিনও তার কাছে। অদ্য ভোরে একবার ভেবেছিলাম একটিবারের মতো তাকে শুধাই কী করে ওমন অদ্ভুতভাবে কাটিয়ে দিচ্ছে তার সময়টুকু। তারপর দিনকার ব্যস্ততায় ভুলে গিয়েছিলাম জাগরণ কালের পরবর্তীকালের আচমকা চিন্তাটা। তারপর আবার যখন মনে পড়ে প্রশ্নের কথা তখন এক ভোর তার পরিচয়টুকু বদলে নিয়েছে আরেক ভোরের কাছে তার পরিচয়পর্ব হস্তান্তর করবে বলে!
 
আজ সারাদিনের কোন এক সময়ে ভেবেছিলাম তোমাকে। কোন সে সময় আমি জানিনা। প্লিজ জানতে চেয়ো না সময়ক্ষণের সময়ের কথা। আমার করজোর নিবেদন তোমার কাছে সেই পূর্বেকার মতো। জানি, বলবে- আমি কী জানতে চেয়েছি কখনো? এখানেই আমার সবিস্ময় সম্মতি! তাই তোমার কাছে আমার চাওয়ার ব্যাপ্তি বাড়ে ক্রমানুপতিক হারে। তুমি হয়তো হতাশ করোনি আমাকে কভু তবু মাঝে মাঝে ভয় হয়। কেন হয় তা জানিনা। জানো, মাঝে মাঝে আমি একলা পথের পথিক হয়ে যাই যখন নিজেকে খুব বেশি অচ্ছ্যুত ভাবি। মনে হয় আমিই কেবল চলছি সময়ের সমান্তরালে। যার শুরু আছে কিন্তু সমাপ্তি মনে হয় অধরাই কোনো। আমি সে পথে ছুটি সেই জন্মাবার কাল থেকে আজোবধি।
 
আমি সচেতনভাবেই মনে রেখেছি কোন এক নিস্তরঙ্গ দুপুরে আমরা একটা রেললাইনের স্লিপার ধরে হেটেছিলাম। বিশ্বেস করো, যে রেললাইন সমান্তরাল হয়ে ছুটেছে আপনার ধর্মপালন করবে বলে। আমি জানিনা কেউ কী ভেবে নিয়েছিলো রেললাইনের সমান্তরাল স্লিপারের মতোই আমাদের জীবন এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমি তোমার একটি হাত মুটো করে রেখে হেটেছিলাম বলে জীবন চলবে না সমান্তরাল পথে বলে মনোস্থির করেছিলাম। হয়তো সে পথেই হাটছি আমি এবং আমরা। ভেবো না আমি বলার পরে আমরা বলছি কেনো! আসলে আমার বলে নেয়া আমি‘র মধ্যে তুমিও আছো। তাই আমরা বলার আগে আমি প্রায়শই আমি বলে যাই যাতে করে আমার স্বপরিচয়ের সম্ভোধনের মাঝে তুমিও থাকো! আমি জানিনা আমার মতো করে তুমিও ভাবো কী-না! এ আমার এক আচানক প্রশ্ন ভাবতেই পারো; ভাবতে পারো হয়তো অবিশ্বাস্যনেত্র ঘুরছে তোমার মাথার উপর দিয়ে। কিন্তু আমি হলফ করেই বলি তা নয়; হতে পারে অতি ভালোবাসার সম্মোহন দৃষ্টি!
 
জানো, আমি আজকাল আকাশ দেখিনা। বিশাল আকাশের নীচে নিজেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মনে হয় ! আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকালে কেমন জানি নিজেকে অবাঞ্চিতই মনে হয়। তাই নিজেকে বেঁধে রেখেছি এই বলে যেদিন আকাশের নীচে আমি দাড়াবো সেদিন সাথে থাকবে তুমি। যাতে করে আমি আকাশকে প্রতিযোগি ভেবে তার দিকে প্রতিযোগিনেত্র দেখিয়ে আমন্ত্রণ জানাবো প্রতিযোগিতার। আমি জানি সেদিন সে আড়চোখে আমাদের দেখে মিছে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়বে। জানো, এ আমি বিশ্বাস করতে শিখে গেছি। আর এ বিশ্বাসের ভিত্তিমূলে যে তুমি তা অস্বীকার করার সাধ্য আমার কোন জন্মেই হবেনা তা দিব্যি দিয়েই বলে দিচ্ছি আজ।
যাক, বেলা গড়িয়েছে আজ অনেক অবেলায়। একবার মাত্র চোখ বুজো, একমাত্র অনুভবে দেখো আর একমাত্র চোখ খুলো আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো; আমিও আজ সেই একই পথেই হাটছি!
 
ইতি
পত্রলেখক
 
তারপর কী হয়! তারপর আসলে কী হবার দরকার ছিলো! এ নিয়ে ভাবাভাবির কারণ আছে কোনো। তবে পত্রলেখক যে পত্রপ্রাপকের পত্রের অপেক্ষায় থাকে তার বলার আর অপেক্ষা রাখেনা। এরপর কিছু দিন কেটে যায়। হঠাৎ করেই একটা পত্র এসে আছড়ে পড়ে পত্রলেখকের দুয়ারে। আগেকার পত্রপ্রাপক তখন হয়ে যায় পত্রলেখিকা!
 
সম্ভোধনের ধারে-কাছে গেলে না বলে প্রথমে খানিকটা দুঃখ নিলাম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মনে হলো ভুল কিছু করে বসোনি মনে মনে! আমি এমনই ভাবি আজকাল। তবে সম্ভোধনহীন চিঠির মাঝেও যে মাদকতা আর অদেখা অনুভব জড়িয়ে আছে তা টের পেলাম আজই। ইচ্ছা করে শিরোনামস্থানের ফাঁকা প্রদেশে একটু হাত বুলিয়ে নিলাম। ওমা! ওখানে কী লিখে দিয়েছো তুমি? কিছু দেখিনা অথচ অনুভবের শীতল পরশের মত কিছু একটার অস্তিত্ব ঠিকই গ্রহণ করে নিলাম। তবে সম্ভোধনের কথা বাদ দিলে তুমি ত আগেরকার মতোই আজো মনে হয় আমার কাছে। বদলেছো কী তুমি? নাকি বদলে যাবার অভিনয়ের মিছিলে নাম লিখিয়েছো আবারও!
 
যেমন ছিলো আগেই ঠিক কাছাকাছিই যাচ্ছে!
 
ভেবেছো বুঝিনি কিছু তাই অনেক কথা আওড়ে গেছো। আমি জানি তুমি জানতেই না আমি পড়তে পারি তোমার মনের ভাষা। তাই কিছু গুছানো কথামালা যে মনের ঠিক ঠিক প্রতিরূপ না তা তোমাকে কে বুঝাবে? হয়তো কোন একদিন বলেছিলে ভালোবাসি তাই সে কথাটাকে আমি আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাম কিন্তু মনে হয় এ ছিল এক ভ্রম। ভ্রম কাটলে সূর্যের দেখা মেলে। শাদা শাদা আলোয় মূর্ত হয় চারিপাশ। হ্যা, আমি সে পথেই আছি।
 
তুমি সেদিন আমাকে রেললাইনের স্লিপার ধরে হেটে আসার গল্পটা মনে করিয়ে দিয়েছিলে। অশেষ ধন্যবাদ তোমাকে। আমি আসলে ভুলেই ছিলাম আমরা এই পথ দিয়ে হেটেছিলাম। জানি এ পথে কেউ হাটেনা। শুধুমাত্র মনহীন এক রেল ছাড়া। আমি জানতামই না তুমি রেলসদৃশ কোনো। যে রেললাইন কাছাকাছি থেকে সমান্তরাল পথে তার পথ দেখে সে কভু একই মোহনায় মিশে যেতে দেখিনি। আমি জানতাম না তুমিও সে একই ধর্মবলে বলীয়ান হয়ে এগুতে যাবে। হয়তো তুমি আমার হাত ধরে রেখেছিলে কিন্তু মনে করে দেখো প্রজাপতিও ফুলে বসে তারপর একসময় মধু নিয়ে দূরে পালায়। ফি-বার সে পথের পথ মাড়ায় না। তোমার ধরে রাখা সে হাতকে আমি এভাবেই দেখছি।
 
বলেছিলাম তুমি একটা ইঞ্জিনসম রেলের মত। তোমার গন্তব্য কত ইষ্টিশান। ভেবেছিলাম আমার ইষ্টিশানে তুমি থেমে গিয়ে নতুন কোন পথ দেখবেনা। কিন্তু এই সময়ে এসে আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি সত্যিকারভাবেই বারবার ইষ্টিশান বদলে নিতে চাও। তাই আমার একান্তসময়ের আবেগটুকুকে তুমি নিরানন্দে ভরিয়ে দিতে কসুর করোনি। আচ্ছা বলতো তুমি এমন কেন? এমন কেন আজকালের দিনলিপি!
 
তোমার কথার খেলের মতো বলে দেয়া ‘আমি-আমরা’র সংজ্ঞায়ন আমি দেখেছি। আমার আশ্চর্যবোধ বেড়েছে খুব বেশি করে কারণ আমি বিশ্বাস করতে শিখে গেছি ফাঁকা ঢোল বাজে বেশি! তুমি কেমন করে এই পথে এগুলে আমার মাঝে মাঝে খুব বেশি কষ্ট হয় বিশ্বাস করে নিতে। আচ্ছা, একটি প্রশ্নের উত্তর দাও একটু- আসলে আমি কী কোন অপরাধে জড়িয়ে ছিলাম তোমার কাছাকাছি আসতে চেয়ে? আমি জানি এখানেও তোমার ভাষা আর কথার ফুলঝুরি থাকবে। কিন্তু আমি কেন যে তোমার মনের প্রতিচ্ছবিটা দেখতে পাই এটা ভেবে কষ্টের মাত্রা বেড়ে যায়। আর দশটা সাধারণ কেউ হলে হয়তো বুঝতে পারতো না কী লুকিয়ে আছে তোমার মনের গহীনে। তোমার অন্তরপাঠই মনে হয় আমার সবিশেষ হতাশা!
 
বলেছিলে, আকাশের নীচে দাড়ালে তোমার নিজেকে অবাঞ্চিত মনে হয়। আমি হাসবো না কী করবো ভেবে পাইনা। তুমি তোমাকে অবাঞ্চিত ভাবো এটা আর যাই হোক আমি বিশ্বাস করতে পারিনা। যে তুমি রোজ রোজ নিজেকে বদলাও সে তোমার এসব ছেলেভুলানো পংক্তি যে তা আর কেউ না জানলেও আমি জানি এবং সর্বান্তকরনে বিশ্বাসও করি। তুমি সবাইকে বোকা ভাবো এটাই তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভ্রম বলে আমি মনে করি এবং বিশ্বেস করি কোন একদিন তা বুঝবেই বুঝবে!
 
যাচ্ছে জীবন যাক এ মন্ত্রে আমি বিশ্বেস করিনা বলে শত অবমূল্যায়নও আমাকে তোমার পথে চোখ আটকে দেয়। শুধু একবার মাত্র হলেও আমার অনুভবকে তোমার অনুভব জ্ঞান করো দেখবে বারান্দায় পাতাবাহারের সতেজ পাতার মতো আমি তোমার দরোজায় দাঁড়িয়ে।
 
ইতি
পত্রলেখিকা
Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।