একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২ ডায়েরি: এক অবিবাহিতের অটোগ্রাফ

14/07/2012 16:57

 

বইমেলা শুরুর প্রথম দিনেই অফিসে গিয়ে অফিসিয়াল মেইল খোলার সাথে সাথেই দেখি অন্যান্য আরো অনেক মেইলের সাথে আমার এক কলিগের এক মেইল। মেইল খোলার সাথে সাথে আমার চক্ষু মাথায় উঠার জোগাড়। হায়! এ দেখি আমার বইয়ের প্রচ্ছদ (নিরবচ্ছিন্ন পাখিসমূহ- প্রকাশক: বাঙলায়ন) দিয়ে প্রচারনামূলক মেইল। আমি অবাক হয়ে গেলাম খানিক সময়ের জন্যে। পরক্ষণে মনে পড়লো সে আমার ফেসবুকে কানেক্টেড! তারপর যারা সিসি তে ছিলো তাদের কিছু মেইল আসে আমার কাছে। যার মধ্যে ছিলো অফিসিয়াল নেটওয়ার্কের বাইরের তার পরিচিত কিছু লোক। কিছু সময়ের জন্যে অনেক ভালোলাগায় পুর্ণ হয়ে গেলো মন। তারপর কাজে ডুব স্বাভাবিক নিয়মেই! এটা যে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার প্রকাশ তা বুঝতে বাকি থাকলো না আর!
দুপুরে আমার ফোনে (পিএবিএক্স) এক কলিগ আমাকে জিজ্ঞেস করলো অফিসে কেন? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম মানে কী? ও হাসতে হাসতে বললো, আজ বইমেলা শুরু না! আমি হ্যা সূচক জবাবের পড়ে সে বললো আপনার ত আজ এখনই ছুটি নিয়ে চলে যাওয়া উচিত! আমি হাসলাম এবং বললাম, আমি আসলে সে রকমের কেউ না। যে পাত্রে থাকি সেখানেই মানিয়ে যাই! তাছাড়া বইমেলার শুরুর দিকে খুব একটা যাওয়া হয়না মেলায়। এবারো তাই হবে! তারপর বিকেলের দিকে ব্লগার জ,ই মানিকের মাধ্যমে জানলাম ২তারিখে তাদের সরলরেখা বক্ররেখা’র মোড়ক উন্মোচন। আমি সাধারণত প্রথমদিককার মেলাপ্রেমী নই কিন্তু মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান মিস করতে চাইছিনা বলে বললাম বিকেলের দিকে মেলায় যাবো।
 
দুই তারিখে চারটার দিকে অফিস থেকে বেরুবার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাত করে আরেক কলিগের একটা কাজের জন্যে সিআইডি অফিসে যাওয়ার আমন্ত্রণ না বলতে পারিনি। পুলিশী রাজত্ব তাও আবার সিআইডি তাই তাকে সঙ্গ দিতে রাজি হয়ে গেলাম। সেখানে থাকলাম সন্ধ্যে সাড়ে ছয় পর্যন্ত! তাই মিস করা হয়ে গেলো সরলরেখা বক্ররেখা’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। তবু সাড়ে ছয়ের দিকে শান্তিনগর থেকে রিক্সা চেপে মেলার দিকে এগোলাম। রাস্তায় জ্যাম আছে আর ওদিকে মেলা বন্ধের সময়ক্ষণের ব্যাপারও থেকে যায়। এসব হিসেব মেলাতে মেলাতে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে এক সময়ে পোছালাম মেলা প্রাঙ্গনে। পৌছাবার পরে ফোন দিলাম জ ই মানিককে। জানালেন তারা নাকি চটপটি, ফুচকা খাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গনের ঠিক বাইরে। আমি সেখানে গিয়ে হাজির। একে একে অনেকের সাথে পরিচয় হলো। মনে হলো অনেককেই দেখেছি অনেক আগে কিন্তু আসলে কাউকেই দেখিনি আগে শুধুমাত্র অজানা পথিককে ছাড়া।
তারপর চা, সিগারেট এবং অন্যপ্রকাশের স্টলে গিয়ে কিনে নিলাম সরলরেখা বক্ররেখা। বাইরে ক’জন অপেক্ষমান! কে জানে তাদের কলম উসখুস করছিল কীনা অটোগ্রাফ দেবার জন্যে। আমি বাড়িয়ে দিলাম বইটা। একে একে চারজন অটোগ্রাফ দিলেন। কিন্তু একমাত্র ডাক্তারের রোজনামচা ছাড়া কেউই স্বাক্ষরের নীচে তাদের নাম লিখে দেয়নি। বারোজন লেখকের বই তাই নাম ছাড়া কেমনে বুঝবো কে দিয়েছে অটোগ্রাফ! তাই নাম লিখতে বললাম। হালকা হাসির প্রবাহ বইলো সবার মুখ দিয়ে। ডাক্তারের রোজনামচা জানালেন তিনি আগে থেকেই নিজের নাম লিখে দিয়েছেন। আমি বই কেনার পর ভেবেছিলাম সবার কলম উসখুস করছিল অটোগ্রাফ দেবার জন্যে। কিন্তু হায়, সবাই অটোগ্রাফ দিলো একটা কলম দিয়েই! আমি নিজের পকেট থেকে দুইটা কলম বের করে দেখিয়ে বললাম এক কলমে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন অথচ দেখেন আমার পকেটে দুই দুইটা কলম। অবশ্য কলম দুটো যে আমার নিজের টাকা দিয়ে কেনা নয় তাও জানিয়ে দিলাম। বারোজনের মধ্যে চারজনের অটোগ্রাফ পেলাম। বাকি থাকলো আরো ৮! একজন অটোগ্রাফে নিজের বর্তমান সময়কে তুলে ধরে লিখলেন অবিবাহিত! দারুণ উপভোগ করলাম ব্যাপারটি।
এরপর হালকা চালে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌছালাম লিটল ম্যাগ চত্ত্বরে। মেলা শুরুর প্রথম অবস্থা বলে খুব একটা আড্ডা দেখিনি তখন। হতে পারে সময়ের ঘড়িতে রাত তখন আটের কাঁটায়! আমার ব্লগের স্টল থেকে কিনলাম সজল শর্মা’র ব-দ্বীপ রাতের শায়েরী। বইয়ের গায়ের মূল্য আশি টাকা হলেও কমিশন শেষে গিয়ে দাড়ালো মাত্র ষাটে। অজানা পথিকও কিনলেন সজল শর্মার বই। তিনি আজ কিনেছেন তিনটা বই। আমি মাত্র দুই। তারপর কয়েকজন প্রকাশকের সাথে দেখা হলো। কুশল বিনিময় শেষে মেলা থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে অজানা পথিকের সাথে আড্ডডাসুলভ কথা হলো। অনেক সুন্দর মনের এক মানুষ বলে মনে হলো তাকে। ইত্যবসরে জ ই মানিককে ফোন দিতে গেলাম আমরা দু’জনই। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পেলাম। ফোনের আসল কারণ ছিলো মাঝপথে তাদের সবাইকে হারিয়ে ফেলা!
বাসা ফেরার জন্যে এক সময় রিক্সা চাপি। পেছনে পড়ে হাজারো নতুন বইয়ের গন্ধ। আর সামনে আমার বাসা ফেরার রাস্তা।
Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।