আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ নয় স্রেফ রাজনৈতিক স্বার্থ

22/03/2013 02:34

বেগম খালেদা জিয়া মুন্সীগঞ্জের জনসভায়(১৫ মার্চ ২০১৩) সরাসরি বলে দিলেন শাহবাগিরা “নষ্ট ও নাস্তিক”। তিনি রাজাকারদের বিচার দাবি করা আন্দোলনকারীদের প্রতি সর্বোচ্চ বিষোদ্গার করেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী শাহবাগি নষ্ট নাস্তিকেরাই! বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানানো উচিত অন্তত যুব সমাজের প্রতি তাঁর মনোভাব বুঝিয়ে দেবার জন্যে। অনেককেই বলতে শুনি, এটা তিনি ঠিক করেননি। কিন্তু আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভাবছি অন্য কিছু। আমাদের কাছে মনে হয় তাঁর এই বক্তব্য ঠিকই আছে কারণ একটা তীব্র ধর্মব্যবসায়ী দলের নেতৃত্বে তিনি আছেন এবং এই দলকে টিকিয়ে রাখতে তাঁর এ ধরণের বক্তব্য হয়ত টনিকের মত কাজ করবে! যদিও দেশের প্রায় সবগুলো দলই একই পথের পথিক হয়ে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করে আসছে। তাছাড়া তিনি শুধুমাত্রই বিএনপি চেয়ারপার্সনই না, এর সাথে আছেন ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের নেত্রী। এই ১৮ দলের মধ্যে নামসর্বস্ব কিছু দল থাকলেও বাকিটা পুরোপুরি একটা ধর্মব্যবসায়ী চক্র!

বেগম খালেদা জিয়া রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়া তীব্র গণআন্দোলনকে বিপথগামী তরুণদের আন্দোলন বলতেই পারেন কারণ এই তরুণেরা দেশকে ভালোবেসে দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই আন্দোলনটি মাইলফলক হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। কারণ সরকার এবং বিরোধীজোটের বাইরে থেকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক অথচ রাজনীতি সচেতন মানুষের এই গণচিৎকার এবং দাবি কোথাও এর আগে হয়নি এবং ভবিষ্যতে হবে কি-না এ নিয়ে কেউই নিশ্চিত না। তাঁর “শাহবাগে যারা গিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার নাস্তিক লোক। এখানে যাদের তরুণ দলনিরপেক্ষ বলা হচ্ছে, এটা মোটেও ঠিক নয়। ধর্ম, আল্লাহ-রসুল, ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কে তাদের কোনো আস্থা নেই। শাহবাগে তরুণরা নাচ-গান করছে, অপকর্ম করছে (প্রথম আলো: ১৬ মার্চ ২০১৩) " এই বক্তব্য সরাসরিভাবে জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরকে যে আস্কারা দেয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ খেয়াল করলে দেখা যায় শাহবাগের তরুণদের দাবি কোনক্রমেই বিএনপি’র সাথে সাংঘর্ষিক অথবা বিরুদ্ধে নয়। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন থেকে কখনোই বিএনপি’র বিরুদ্ধে কোন কথা বলা হয়নি। উপরন্তু যেখানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রমাণিত দল জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালে যখন শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে সেখানে বিএনপি’র ডাকা হরতাল নিয়ে তাদের কোন বক্তব্য ছিল না। এই দিকটি চিন্তা করলেই দৃশ্যমান হয় যে গণজাগরণ মঞ্চ তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য নির্ধারণে কখনোই বিএনপিকে প্রতিপক্ষ ভাবে নি।

তাহলে প্রশ্ন আসে কেন বিএনপি গণজাগরণ মঞ্চকে প্রতিপক্ষ ভাবছে? প্রসঙ্গে নানা মুনির নানা মত হতে পারে। তবে একটা উত্তরে সবাই একমত হবেন যে এর পেছনে একমাত্র কারণ জামায়াত-শিবিরকে বাঁচানোর মিশন। ১৮ দলীয় জোটের সবচেয়ে বড় শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। গত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সারাদেশে তারা তিন শতাংশের মত জনসমর্থন ধারণ করে। এই তিন শতাংশ ভোটের কারণেই কি বিএনপি জামায়াত রক্ষার মিশনে নেমেছে? উত্তর অবশ্যই-না! এর পেছনে মুল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে জামায়াত-শিবিরের পেশিশক্তি এবং পেট্রো ডলার! শক্তিপ্রমাণ করেছে বলে অনুভূত হচ্ছে ৪ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার রায়ের আগের দিন এবং সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর সারাদেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে। কাদের মোল্লার রায়ের আগের দিনের প্রশাসনের আস্কারার ফলে জামায়াত-শিবিরের শো-ডাউন এবং সাঈদীর রায়ের পরবর্তী সময়কার সন্ত্রাস আসলে গোয়েন্দা এবং প্রশাসনের ব্যর্থতার নজির বলে আমরা মনে করি। এই দুই ঘটনা সেই সাথে আরব দেশগুলোর জামায়াতি সমর্থন, প্রোপাগান্ডা এবং অঢেল অর্থের হাতছানি বিএনপিকে নির্লজ্জভাবে জামায়াতি কবলে নিপতিত করে। দল বাঁচাতে, দল চালাতে অর্থের প্রয়োজনীয়তা এবং তারেক-কোকোর পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে আসার ফলে জামায়াতি লবিঙয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থে ভাগ বসানোর একটা মোক্ষম উপলক্ষ হিসেবে হাজির হয়েছে এই সমর্থন। ফলে সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করার আগেই বেগম খালেদা জিয়া দেশে এসে জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন দিয়ে বসেন কোনরূপ রাখডাক না করেই।

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, সাঈদির ফাঁসির রায়ের পর সারাদেশে জামায়াত-শিবির যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার মধ্যে ছিল তাদের ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাই যেখানে তারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের বাশখালি-হাটহাজারি, রাজশাহী, বগুড়াসহ আরো কয়েকটি জায়গায় তারা শক্তিশালী ছিল বলে সেখানে প্রশাসন প্রতিরোধমূলক কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে নির্বিঘ্নে সন্ত্রাস চালিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে অবলীলায়। এই কয়েকটি অঞ্চলের তাদের সন্ত্রাসের ফলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। লুট হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়ি-মন্দির। উল্লেখিত অঞ্চলগুলোতে অবর্ণনীয় সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে তারা সারাদেশে এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। এই আতঙ্কের ফল ঘরে তুলেছে জামায়াত-শিবির বিএনপি নামক দেশের সর্ববৃহত রাজনৈতিক দলকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে এসে। অথচ এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিজের দলকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারতেন যুদ্ধাপরাধী এই দলকে বর্জনের মাধ্যমে। তিনি যদি সত্যিকার অর্থেই জামায়াত-শিবিরকে বর্জনের ঘোষণা দিতেন তবে গত চার বছরের সরকারের যাবতীয় ব্যর্থতা আবারো সামনে এসে বিএনপিকে একমাত্র জনপ্রতিনিধিত্বমূলক দল হিসেবে দাঁড় করাতে পারতেন। আপোষহীন নেত্রী বলে খ্যাত বেগম জিয়ার আপোষহীনতা এবার ঠুকরে মরলো যুদ্ধাপরাধী একটা দলের স্বার্থের নখরে। এটা অবিশ্বাস্য এবং ন্যাকারজনকও তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মহাকাব্য সৃষ্টিকারী গণজাগরণ মঞ্চ সারাদেশে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছে। সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে এক ও অভিন্ন দাবিতে একত্র করেছে। এই দাবিটি হল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং অভিযুক্ত দল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধকরণ। শাহবাগ থেকে এই আন্দোলন শুরু হলেও নিমিষে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুরসহ দেশের সব জায়গায় অভিন্ন আদলে নির্মিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ এবং সেখান থেকেই উচ্চারিত হয় একই দাবি। সারাদেশের মত পিছিয়ে নেই প্রবাসী বাঙালীরাও। তারা দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় একত্রিত হয়ে সংহতি জানিয়েছেন, জানাচ্ছেন। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল কিছু ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টের মাধ্যমে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিপরিতে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে। কারণ প্রতিবাদি তরুণ সমাজ মনে করছিল কোন গোপন আঁতাত হয়ে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নামক গণদাবিকে উপেক্ষা করে। তাদের মনে প্রশ্ন ছিল- কত লোককে হত্যা করলে একজন অপরাধির ফাঁসির রায় হতে পারে! পরে এবং প্রতিবাদীরা রাস্তায় দাঁড় হবার সাথে সাথে হাজার হাজার লোক এসে মিশে গেছে এ স্রোতের সাথে। প্রথম থেকেই এই গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার এবং কুৎসা রটানো হয়েছিল। এর শুরু করেছিল ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লাসহ তাদের সমমনা কয়েকটি গ্রুপ যারা জামায়াত-শিবির কর্তৃক পরিচালিত এবং এর সাথে প্রবল বিক্রমে তাল মিলিয়েছে জামায়াত-শিবির ঘরানার কিছু মিডিয়া। তাদের উস্কানি এবং অপপ্রচার এমন একটা রূপে প্রকাশ পেয়েছে যাতে করে দেশের মধ্যে একটা পরিষ্কার বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা চলেছিল। শুরু হয়েছিল ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ড দিয়ে। পরে ধর্মীয় উস্কানির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় শহীদ মিনারের হামলা, ভাংচুর ও পতাকা পোড়ানো হয়েছে। শাহবাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মোটাদাগে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদেরকে ইসলাম ধর্মবিরোধী বলে প্রচার হয়েছে। এই প্রচার এমন জোরালো আকার ধারণ করেছে যে খোদ বিএনপি দলীয়ভাবে সবাইকে নাস্তিক এবং ইসলাম ধর্মবিরোধী বলে প্রচার করছে এবং সেই সাথে প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে।

আস্তিক-নাস্তিক আখ্যা এবং একে নিয়ে রাজনীতি নতুন মনে হলেও আসলে তা নয়। সময়ে সময়ে এই দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে এরকমভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছিল। নতুন নামের এই বিভাজনরেখা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাবার একটা অপকৌশল মাত্র। কিন্তু এই সময়ে এসে স্পষ্টতই দেশে সাম্প্রায়িক দাঙ্গা বাঁধাবার কোন সুযোগ না থাকায় দেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে ধর্মীয় শত্রু বলে উস্কানি দিয়ে নতুন করে নতুন ভাবে সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। প্রজন্মের এই জাগরণকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাবার জন্যে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে আস্তিক-নাস্তিক উপাখ্যান। সারাজীবনে যতবার আস্তিক-নাস্তিক বাক্যদ্বয় শোনা হয়নি এই কয়েকদিনের প্রতিদিন তারচেয়ে বেশি কানে আসছে এই শব্দগুলো। মনে রাখা উচিত এই বাংলাদেশ ‘৪৭-এর আগের বাংলাদেশ না। এটা ২০১৩ এর বাংলাদেশ। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এই দেশের মানুষ চিন্তা-চেতনায় এগিয়ে গেছে অনেক দূর। আমরা বলছিনা সবাই এগিয়ে গেছে কিন্তু সমাজ এবং রাষ্ট্রের পরিবর্তনের সাথে যারা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকে সেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী এগিয়েছে অনেক দূর। তাই আস্তিক-নাস্তিকতা আখ্যান শুধুমাত্র বক্তৃতা, বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত এবং অন্যান্যদের প্রচারিত “নষ্ট নাস্তিক”কে অভিধাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করি। কারণ আমরা মনে করি আস্তিকতা-নাস্তিকতা বিশ্বাসের ব্যাপার। এবং প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ বিশ্বাসকে ধারণ করে। তৃতীয় কারো দ্বারা কোন বিশ্বাস নেতিবাচক অর্থে  প্রচার হলে তৃতীয় ব্যক্তির নিজ বিশ্বাস সম্পর্কে দোদূল্যমন্যতা প্রতীয়মান হয়। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিক বিশ্বাস নিয়ে কোন কথা বলব না কারণ আমরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেদের বিশ্বাসকে কেবল ধারণই করিনা সর্বক্ষেত্রে লালনও করি সুস্থভাবে।

শাহবাগ প্রজন্ম আন্দোলনের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা নাস্তিক আখ্যা পেলেও তাদের প্রমাণের দরকার নাই তারা আস্তিক কি-না! বাংলাদেশের সংবিধান এখানে ব্যক্তিক স্বাধীনতাকে মূল্য দিয়েছে। রাজনৈতিক বক্তৃতার বলি হয়ে তার নতুন করে কিছু প্রমাণের প্রয়োজন নেই। এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীরা এবং তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াত-শিবিরচক্র(তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংস্থা) সারাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে মুক্তিকামী বাঙালীকে “কাফের” আখ্যা দিয়ে। এই সময়ে প্রজন্ম আন্দোলনের সবাই একাত্তরের খুনি আর লুটেরা চক্রের বর্তমান সংস্করণের মুখে যদি নাস্তিক-ইসলাম-বিরোধী আখ্যা পেয়ে এই দেশকে রাজাকারমুক্ত করে ফেলতে পারে তবে এই  “নষ্ট-নাস্তিক’’ এক মধুর বিশেষণ হয়ে যেতেও পারে।

আস্তিক-নাস্তিক, কাফের-মুরতাদ যাই বলা হোক না কেন এই প্রজন্ম উদ্বিগ্ন না এই রকম প্রচার-অপপ্রচারে। তারা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে চায় না তারা কি সত্যিকার অর্থেই আস্তিক না নাস্তিক! কারণ বর্তমান আন্দোলন এবং জাগরণে যারা সমর্থন দিচ্ছে এবং কাজ করছে তাদেরকে গ্রহণ করা হয়নি ধর্মীয় বিশ্বাস দিয়ে। স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন যেখানে সেখানে দল-মত-পথের মানুষ আসবে- এই স্বাভাবিক। ধর্তব্য যে, অংশগ্রহণকারীরা কতখানি আন্দোলনের চেতনার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে। মনে রাখা দরকার, আন্দোলনে হাজারো মানুষ অংশ নেয়। এর বাইরে থাকে তারচেয়েও বেশি সমর্থক। তারচেয়েও বেশি থাকে নির্বাক দর্শক; যারা দূর থেকে বিশ্লেষণ করেই যায় কেবল! আন্দোলনে সবাইকে যোদ্ধা হয়ে যেতে হবে এমন না। যোদ্ধাদের রসদ যোগাতে কিছু লোকের দরকার। যারা শাহবাগ আন্দোলনের সাথে স্বশরীরে উপস্থিত হয়নি তারা এই আন্দোলন সংশ্লিষ্ট নয় এমন ভাবা উচিত না। তারাও জড়িয়ে আছে এখানে। কারণ তাদের অব্যাহত সমর্থন, সহযোগিতার মাধ্যমে এই আন্দোলন জনগণের মাঝে পৌঁছে গেছে এবং অপেক্ষায় আছে আরেকটি মহাকাব্য রচনা করতে।

আমাদের পুর্বপুরুষের ইতিহাস প্রমাণ করেছে বৃহৎ কিছু অর্জনের জন্যে ক্ষুদ্র কিছু বিসর্জন দিতে হয়। হোক না তা সময় অথবা অন্য কোন কিছু! এই প্রজন্ম সব দিক থেকে প্রস্তুত হয়ে আছে। তাদের কাছে এই সব অদ্ভুত আস্তিক-নাস্তিক অভিধা শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের এক ঘৃণ্য খেলা ছাড়া আর কিছু না। এই প্রজন্ম যুদ্ধে নেমেছে যখন তখন  সমূহ রাজনৈতিক খেলা আর ছলচাতুরি তাদের কাছে ফেলনাই কেবল!

Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।