রাত জেগে আমরা ঠকিনি-১

 

তোমার কাছে কিছু চাইবো বলে ভুলে গেছি আর সব চাওয়া-পাওয়ার হিসেব
 
সবশেষে পাখি হয়ে যাবার কালে খসে পড়েছিল অবাধ্য পালক ধূসর পৃথিবীতে। পৃথিবীও মূখিয়ে ছিল, চাতকরূপি প্রতীক্ষায় কাটিয়েছিল কত-শত যুগ যার হিসেব রাখেনি কালের ঘড়ি। পালে পালে লাগা উদ্দাম হাওয়ায় নিথর প্রাণে জাগে প্রাণের আবেশ। বিকিরণ ঘটে আরো কিছু আলোর, মূখর হয় পৃথিবীর গোটা অবয়ব।
 
জেনেছিলাম, পৃথিবীর পথে হাটতে গেলে পায়ের তলায় খানিক অবলম্বন জরুরী। আমার জানবার কাল হারাতে চায় আমাকে আন্ধারে রেখে। আমি যে পথ হাতড়াই সে পথেও রেখে যেতে চাই খানিক দাগ যাতে করে বিস্মরণেরকালে কেউ কোনজন ক্ষণিকের জন্যে হলেও আমাকে ভেবে পার করে আর কিছু ক্ষণ। আমার হেঁটে যাওয়া পথ আমাকে আকুল করে দেখায় ওড়ে যাওয়া পাখিবিশেষের খসানো ডানা। আমার আকুলতা বাড়ে বাঁচার আর তোমাকে একান্ত করে কাছে টানার।
 
সেই কবে থেকে পথশুরুকালের স্থির করা লক্ষ্যবিন্দু কালে-ভদ্রে লক্ষ্যচ্যুত হয় বলে জেনেছিলাম যে বার্তা বার্তাবাহির কাছে তা সময়ের ফেরে দেখায় তার পরিপুষ্ট অবয়ব। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখে যাই আর আলগোছে হা-হুতাশায় ভুগে তোমাকে ভাবি-সময়কে অতিক্রম করবো বলে।
 
আমার যে সময় আমার বলে আর সবে লিখে দিয়ে রেখেছে তার কিছুটা হলেও ভাগ দিয়ে দিতে চাই তোমার জন্যে। তুমি যদি একান্ত কোন সময় ধার চাও আমার কাছে আমি তিন সত্যি দিয়ে বলছি-আমি আমার কাছে রাখবো না এ সময়ের কানাকড়িও!
 
তোমার হাত ধরে নিলে পেয়ে যাই জীবনের সব হিসেব-নিকেশ
 
এই গ্রীষ্ম পাড়ি দিলে আমি জেনে যাবো তোমার বাড়ি যাবার পথ। সে পথ তুমি দেখাবে বলে বলেছিলে পরিজনদের। আমি তাই পথ হাতরাতে গেলে সামনে আসো তুমি। চেনা রূপ হাওয়ায় মিশে গেলে বাকি থাকে বায়বীয় কোনো। পথ, পথ তবু পথ; অচেনা কোনো এক!
 
তোমার বাড়ি জেনেছিলাম আমার বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা পথের। তবু পথে নেমে পথ খুঁজি। বাড়ি বাড়ি অনেক বাড়ি। তোমার বাড়ি যাবার পথে আর একটা পথ এসে গেলে আমার পিছু ছোটার সুযোগ কই- তোমার বাড়ি ধরার পথ ছাড়া!
 
এই ভ্যাপসা দুপুর বিকেলে এসে বদল করেছে রূপ। তবু তোমার রূপ বদলায়নি কানাকড়িও। চেনা-জানা চোখ-মুখ এক হয়ে গেলে আমার পড়ে যেতে হয় ধন্দে। তবু তুমি, শুধু তুমি হয়তো জেনেছি শেষাবধিও তুমি। তাই দিন-রাতের ভেদ সব একীভূত হয় তোমাতে এসে, তোমার তোমাকে সাথে করে।
 
জন্মে জেনেছি আমি আমার এ হাত বড়ো লোভাতুর এক। এ হাত প্রতীক্ষায় থাকে আর এক হাতের যে একান্তই তোমার। বাজারে বাজারে অনেক হাত। সব হাতই মুখিয়ে থাকে হাত ধরার। আমিও বাদ যাইনি সে দলে নাম লিখাতে তবু তার প্রতীক্ষা; হাতের জন্যে। শক্ত করে ধরার জন্যে। কাছে এসে কাছে টানার জন্যে।
 
ধরে রেখো এই হাত মুঠো করে যেন উদ্দাম হাওয়া সামনে এসে খুঁজতে বসে পালাবার পথ। 
 
এক সন্ধ্যেয় একদিন আকাশ হবো
 
কোন এক সন্ধ্যেয় একদিন টুপ করে আকাশ হবো। তখন সমুচ্চ উচ্ছ্বাসে ভারি হবে প্রতিবেশ। হাওয়ায় ভেসে ভেসে আকাশ পানে ওড়তে ওড়তে নিজেই হয়ে যাবো সুনীল আকাশ। পথচলতি ব্যতিব্যস্ত চোখগুলো আমাকে ভেবে ভেবে পাড়ি দেবে আর অনেকটা পথ। তবু আমি আকাশ হবো। মনগহীনের স্বপ্নবোঁনা সেই সে আকাশ!
 
আমার বাড়িতে কোন এক সন্ধ্যেয় একদিন সন্ধ্যে নেমেছিল। তবু আমার আকাশ হওয়া হয়ে ওঠেনি। আকাশ হতে গিয়ে একদিন হঠাতই ধপ করে পড়েছিলাম মাটিতে। কিছু বিচ্ছিন্ন কথকতা ঘিরেছিল আমাকে। স্বপ্ন মার খায় তবু মরে না। ফি-বার দেখি, পূণর্বার স্বপ্নে মাতি! হয়তো তোমার ইস্পিত আবর্তন ওখানে বলেই আমি রোজ রোজ আকাশ হতে চাই।
 
মাঝে মাঝে তুমি যখন ঘাপটি মেরে আকাশ দেখতে বসো মনে হয় ফি-বার; ইস, আমি যদি আকাশ হতাম তবে তোমার সবগুলো চোখই নিবদ্ধ হতো আমাতে। জানো, আমি এখনো আকাশ হয়ে ওঠিনি কখনো তাই তোমার অন্তর্গত চোখ দিয়ে আমাকে দেখাও হয়না কোনদিন। তবু আমার চিন্তাকালে যখন তুমি আসো তখন আমার আকাশ হবার সাধ জাগে। মনে হয় জগতের সবগুলো পাখিকে তার আরাধ্য ডানা ফিরিয়ে দিয়ে উচ্চকণ্ঠে বলে দেবো এবার নির্বিঘ্নে ওড়ো আমাতেই। আমার সবটুকু সৌন্দর্য তোমাদের নিজেদের ভেবে আমাতেই অবগাহন করে নীড় বুঁনো আমাতেই।
 
তোমাকে একদিন কোন এক একান্ত সময়ে বলেছিলাম তুমি ঠিক ঠিক পাখি প্রতিরূপ। তাই পাখিরূপি তোমার নীড় বুঁনো আমাতে সেই আদিকালের বলে দেয়া কথা মতোই। কাল, কাল কত কাল যায় তবু তোমার আসার কাল হয়না এখনো সেই সাথে আমার আকাশ হওয়ার কালও। তবে জেনো আমি একদিন ঠিকই আকাশ হবো; তোমার সবটুকু ভালোবাসা জমিয়ে রাখার আকাশ।
 
আমার দেরি হয়ে গেলে তুমি বৃষ্টি হও
 
তুখোড় রৌদ্রদিন শেষে জবুথবু দেহ নিয়ে তোমার দিকে তাকালে মনে হয় তুমি অপেক্ষায় ছিলে আর পশলা আলোর। আমি অবাক নেত্রে দেখি তোমার অপলক চাহনি আর বোবা ভাষাপ্রয়োগের নিদারুণ কৌশল। যা এতদিনে লুকিয়ে রেখেছিলে বুকপকেটে। একান্ত কোন এক সময়ে আমার হাতে সঁপে দেবে বলে।
 
জেনেছিলাম, তুখোড় রৌদ্রদিন তোমার সখা সেজেছে অদ্য। তাই আমিও আনমনে তাকে সখি ভেবে কত রাত পার করেছি অথচ ভোরের আলোর সাথে সাথে সে পালিয়েছে হয়তো তোমার দেখিয়ে দেয়া পথে। আমি বৃথামনোরথে ঘরে ফেরার ক্ষণে বারবার পিছু তাকাই তোমার দেখা পাবো বলে।
 
তোমাকে তোমার মাঝে একদিন দেখেছিলাম বলে তাকে আমাতে রূপান্তরের ইচ্ছে জেগেছিলো খুব। তাই চুপি চুপি তোমার কাছে আসার সাধ জাগে অবচেতন মনে। পরক্ষণে ভ্রম হয়, ভ্রম কাটে। ফিরে ফিরে আসি নিজের কাছে। তবু মাঝে মাঝে দেরি হয় তোমার কাছে আসার। আমার দেরি হওয়া সময়ে তুমি নিজেকে আগলাও তোমার কেন্দ্রবৃত্তে। তারপরের ফিরিস্তি- তোমার বৃষ্টি হওয়া আর ঝরঝর ঝরে পড়া।
 
ট্রেনে চড়লে মনে হয় তুমি চলে যাচ্ছো দূর থেকে বহুদূরে
 
কথা ছিল আমাকে সাথে করে চড়া হবে সাধের ট্রেন। আমরা আমাদের মত সাজিয়ে নেবো ট্রেনের কামরা আর বগিগুলো। ট্রেনের কু-ঝিক-ঝিক স্বরের সাথে আপাদমস্তক মিতালি করে কোন একসময়ে নিজেদের আবিস্কার করবো আপাত অজানা আর অচেনা কোন স্টেশনে। যেখানটার কথা আমি ভেবে ছিলাম কোন এক একান্ত মুহুর্তে যার হিসেব রাখতে পারেনি মনোইস্টিশন। তাই নিজেকে হারিয়ে দেবার কালে খুঁজতে নামবো তোমাকে সাথে করে।
 
বলেছিলে নিজের জাগ্রত বিবেককে স্বাক্ষী রেখে চোখ খুললে তোমাকে চোখে রাখি আর অচেতন মনেও স্থান দিই তোমাকে। আমি বিশ্বাস্যনেত্রে তাকিয়েছিলাম আর অপেক্ষায় ছিলাম দূরে গেলে তুমি কত দূরে যাও তার হিসেব রাখবো বলে।
 
বলেছিলাম অংকে কাচা ছিলাম না আমি কোনদিনই। তাই পাস ছাড়া ফেলের দেখা হয়নি অদ্যাবধি। তাই কাছ-দূরের হিসেব জমা রেখেছিলাম মনের গহীনঘরে। সময়মতো খাতা-কলম নিয়ে বসবো বলে। তারপরের কাহিনী সবার জানা। আমাকে একা রেখে তোমার ট্রেনে চড়া আর আমাকে পেছনে রেখে নিত্য ছুটে চলা।
 
তুমি ছুটে চলো ট্রেনের গতির সাথে। আমি অপেক্ষায় থাকি; কে জানে কার অপেক্ষায় থাকা হয়-থাকা যায়। তবে সেই জানে যার কানে এখন নিত্য পৌছায় কু-ঝিক-ঝিক স্বর। ইত্যবসরে আমি আমাকে বলি-ট্রেনেচড়াজনের পিছু ছুটো। আমি ছুটে যাই, ছুটে চলি অথচ মাঝপথে এসে আর কোন পথের দেখা না পেয়ে থেমে যাই। নিজে নিজেকে আগলে রাখি খোলসের ভেতর।
 
আমার এ খোলস বড্ড পুরু। তবু জেনে-শুনেই আমি ঢুকি। আমি আর আমার খোলস জানে না তার ভেতরকার কিছু। তাই কখনোবা আমাকে আমা থেকে আলগা করে নিলে স্বভাব আমি মাঝে মাঝে ছুটে যাই ট্রেনের পিছু।
 
আমাকে থামাবে কে, আমি যে আমাকে ছেড়ে এসেছি আমার আমিত্ব থেকে!
 
তোমার কী একটু সময় হবে সময় দেবার
 
ইচ্ছে ছিল বেড়াতে যাবো অজানাকে সাথে নিয়ে। নেয়া হবে আচানক কোন পথে পা ফেলার সমূহ অনুভূতি। দিন-রাতের ভেদ ভুলে পূরো দিন ধরে আবিস্কার করবো নূতন কোন পথ। যে পথে আর কেউ হাটেনি ও পর্যন্ত। তুমি-আমি ছাড়া যে পথের দিশে পায়নি-পাবেনা কেউ কোনজন।
 
পৃথিবীর পথে হাটতে গিয়ে অনেকগুলো পথ আমার সাথে পরিচিত হয়েছে। তাদের অনেকের চেহারা মিশে গেছে কালের স্রোতে আবার অনেককেই মনে রেখেছি সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে। তাদের কেউ কড়া নাড়ে, কেউ হাতড়ায়। তাই মাঝে মাঝে ভাবতে বসি যদি কখনো পরিচিতের দাবি নিয়ে কেউ সামনে দাঁড়ায় আমার কী আছে করার? এখানে কেমন ভাবছো তুমি!
 
এই ক'দিন আমি একটা হতাশার পাখি দেখেছি যে রোজ রোজ আকাশ ছেড়ে আমাতে এসে বাসা বাঁধে। আমি ফি-বার তাকে তাড়াতে গিয়ে বৃথা মনোরথে ঘরে ফিরি। সেও আমাকে ছাড়েনা যেন আমিই তার কাঙ্খিতজন। আমি তাকে দেখে হতাশ হই আর ব্যর্থজনের মতো অভিসম্পাত ছুঁড়ি বাতাসে; কেন তবে পেলে না আর অন্যকোনজন-অন্য কেউ!
 
বলেছিলাম, তোমার সাথে আমার কথা আছে একান্ত। যা এতোদিনে লুকিয়ে রেখেছি জামার আস্তিনে তোমাকে দেখাবো বলে। তোমার সময় হয়নি কোনদিন সময় দেয়ার!
 
বলেছিলে, একদিন সময় করে বেড়াতে যাবো তোমার কাছে। কিন্তু তা আর হলো কই? এই সময়ে আমার বাড়ির পাশ দিয়ে নিত্য বয়ে চলা সুরমা কতবার মরা নদীর খাতায় নাম লিখিয়েছে আর কতবার যে ফিরেছে স্বরূপে তার হিসেব রাখেনি কেউ এমনকি তুমি-আমিও!
 
তোমার কী একটু সময় হবে সময় দেবার!
 
 
কাছে এসে দেখো এ আমি তোমাকে কত কাছে রাখতে জানি
 
যাকে দেখি তাকে ভাবি যাকে ভাবি মাঝে মাঝে তাকে দেখিই না। বলেছিলাম এ এক আজবকাল। সব কেমন জানি এক অচেনাসময়। আমার ভাবনাকালে তুমি হয়ে পড়ো বেকবেঞ্চার। আমি সামনে বসে গেলে আনমনে প্রত্যাশায় থাকি তোমার এগিয়ে আসা মুহুর্তের! তুমি আসো; আসো না! ব্যতিব্যস্ত সময়ে খসে পড়ে আরাধ্য পালক কোনো।
 
এ এক আজব ক্ষণ। আমাদের অচেনাজনকে নিয়ে আমরা ভাবি, ভেবে যাই। কদাচ তারা আমাদের খবর নেয়। অথচ আমরা ধারণ করি তাদের, করে যাই! তারা আসে মাঝে মধ্যে অথবা উঁকি দিয়ে দেখে যায় পথ। আশ্রয় খোঁজে স্বস্তির! তারা যারা আসে তারা ভাবনা রঙে তাদের আমি রাঙাতে চাই মখমল রঙে কিন্তু কদাচ আমার পথে নেমে খুঁজতে যায় অন্য পথ। তবে আমি নাছোড় হয়ে পিছু নিই। আমাকে হারাবে সাহস কত! আমার মাঝেও আছে কামনার ঢঙ। কাছে পাবার; কাছে টানার!
 
শেষ কবে তোমাদের থেকে তোমাকে আলগা করে লিখেছিলাম কবিতা কোনো, মনে নেই। কারণ জেনেছিলাম তোমাকে ভাবার কালে তুমি কবিতা হয়ে ধরা দাও আমার কাছে। তোমাকে আমি আজ আস্ত কবিতা ছাড়া ভাবতে পারি না কিছু। তাই অদ্যকার ক’দিন আমি কবিতা লিখিনি একফূটোও। আমার কলম অথবা ল্যাপটপের প্রতিটা বিন্দু ধারণ করে তোমার প্রতিচ্ছবি। তাই যখনই লিখতে বসি কবিতার আরাধ্য কোন লাইন তখনই সামনে এসে আমাকে নিবদ্ধ করো তোমার কেন্দ্রবৃত্তে। আমি বেরুতে পারিনা আর তোমা থেকে। লিখা হয় না একলাইনও!
 
বলেছিলাম, তোমাকে বেকবেঞ্চে দেখে আমি সতত প্রতীক্ষায় থেকেছিলাম তোমার আগমণী ক্ষণ দেখবো বলে। আসা হয়নি কাছে বলছিনা আজো তোমাকে অন্তরে ধারণ করি বলে। প্রতীক্ষা, প্রতীক্ষা ইস, অহর্নিশ প্রতীক্ষা! তবু তোমার আসার কাল রূপায়ন হয়না বাস্তবতার আবরণে।
 
ভাবতে পারো এ অসংলগ্ন কিছু। আমি কিন্তু ভাবিনা তার কানাকড়িও। তোমাকে চাওয়ার কালে আমি যদি হয়ে যাই আমি ছাড়া আর কেউও- তবু ছাড়ছি না তোমাকে।
 
কাছে এসে দেখো এ আমি তোমাকে কত কাছে রাখতে জানি!

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।