যুদ্ধপাপির বিচার চাই

 

গত নির্বাচনের আগে "সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম" নামে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে গড়া একটা সংগঠনের একটি জোর প্রচারণা ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বর্জন করার। তাদের এ প্রচারণা খুব কাজ দিয়েছিল। পূরো দেশবাসি একাট্টা হয়ে তাদের কথামত স্বাধীনতাবিরোধীদের 'না' বলেছিল। বর্জন করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তাদের সাথে জোট করা শক্তিকে। তারপরের কাহিনী সবার জানা।
 
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি বলে দাবিদার আওয়ামীলীগ ক্ষমতা আসে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়ে। প্রথম দিকে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সমর্থনের ভিন্ন ভিন্ন বুলি আওয়ালেও এখন সময়ের ফেরে তা ক্রমে মিইয়ে এসেছে। এখনও মাঝে মাঝে তারা এর স্বপক্ষে কথা বলে কিন্তু এটা যতটা না তাদের নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নের তারচেয়ে বেশি বোকা জনগণের ধোকা দেয়ার জন্য।
 
নির্বাচনের আগে যে সেক্টর কমান্ডারসরা ফি দিন সংবাদ সম্মেলন,মিছিল-মিটিং আর প্রচারনা চালিয়ে মাঠ গরম করেছিল আজ তারা কোথায়? আজ তাদের মুখ থেকে টু'শব্দটিও উচ্চারিত হতে দেখিনা। এদের কেউ কেউ সরকারের ভিন্ন ভিন্ন অংশে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে সে সময়টা তাদের কোথায় বিচারের দাবি জানাবার?
 
সরকারের আইনমন্ত্রী মাঝে মধ্যে কথাটা তুলছেন বটে কিন্তু সেটা যতটা না আন্তরিক তারচেয়ে বেশি মিডিয়ার প্রশ্নবান থেকে বাচার জন্য। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বলেছিল ২০০৯-এর বিজয় দিবসের আগে তারা এ বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করবে কিন্তু তেমন কার্যকর উদ্দ্যোগ কই? মনে করিয়ে দিই বিজয় দিবসের আর মাত্র দিন তিনেক বাকি।
 
বেশ ক'দিন আগে সেক্টর কমান্ডারসদের কেউ একজন বলেছিল তারা আগামী নির্বাচনের আগে দাবিটি নিয়ে আবার জনগণের সামনে এসে দাঁড়াবে। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? তারা নিজেরা সন্দিহান বিচার নিয়ে! অথবা তারা নিজেরাও সরকারের ঝুলিয়ে রাখা মূলো ধরতে উদগ্রীব! আমি জানি না। আমার মত দেশবাসিও জানে না আসলে কী হতে যাচ্ছে?
 
ক'দিন আগে যুদ্ধাপরাধী ৫০জনের একটা তালিকা প্রকাশ পেয়েছে। তালিকার ৫০নম্বরের নাম দেখে আমাদের আতকে ওঠার জোগাড়। তিনি আর কেউ নন 'দিন বদলের" মন্ত্রীসভার একজন মন্ত্রী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই! আমাদের আশ্চয্য হয়ে এখন লক্ষ্য করতে হয় কীভাবে একজন যুদ্ধাপরাধী তাদের মন্ত্রীসভার সদস্য হয় যারা কী না নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি বলে দাবি করে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে বলে অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসেছিল!
 
আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা ৭১-এ তার জীবনের মায়া ত্যাগ করে নেমেছিলেন যুদ্ধে। আমার বাবাসহ দেশের অগুন্তি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যা ইতোমধ্যেই গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আমার,আমার বাবাসহ দেশের কোটি মানুষ যে বিচারের জ্জন্য অধীর হয়ে বসা এতোদিন সে হৃদস্পন্দন বুঝবে না কেন ক্ষমতার অধিপতিরা!
 
বিশ্বের দেশে দেশে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচার। আমরা তা থেকে বাইরে থাকবো কেন? আমার হৃদয়ের প্রতিস্পন্দনে "যুদ্ধপাপির বিচার চাই" বলে যে দাবিটি ক্রমে জোরালো হচ্ছে তা এখন সঞ্চারিত হয়ে গেছে পূরো বাংলাদেশে।
 
আমার/আমাদের এ দাবি গণদাবি। এ গণদাবি অগ্রাহ্য করার শক্তি কে রাখে?
 
১২ ডিসেম্বর ২০০৯

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।