অণুগল্প: রেললাইন আর তুখোড় রোদ্দূরে

 

বাসার পাশ দিয়ে যে রেললাইনটা সমান্তরাল হয়ে চলে গেছে দূরে তার একদিকে কমলাপুর আর আরেকদিকে নারায়ণগঞ্জ। এই দুই পাশের কোন দিকেই রেল চড়ে যাওয়া হওনি কখনোই। তবু মাঝে মাঝে সরু স্লিপার ধরে হাটা ধরি, একান্তে। বেশিদূর যাওয়া হয়নি কোনদিন। কয়েক পা, হিসেব করে দেখলে কয়েক শত পা। তারপর পেছনে পড়ে থাকা আমার ভাড়া করা বাড়ি আমাকে ডাকলে আমাকে ফিরে আসতে হয়, ফিরে আসি। এভাবে ফি-বার;বারবার।
 
এই ক'দিনে চৈত্রের রোদ্দূরে খাঁ খাঁ হয়ে পড়ার যোগাড় আমার পড়শীজন; আমার পাড়া। বের হওয়া হয়না তাই সময় করে। তবু সেদিন যেদিন ফি-বার তুমি আমার কাছে এসেছিল আমার ভালোবাসার টানে। সেদিন পাড়াময় যতই রোদ্দূরে ক্লান্ত হয়েছিল আমাদের পরিচিতজন সে সময় আর কিছুর ধার না ধেরে আমি তোমাকে নিয়ে নেমে পড়েছিলাম পথে- রেললাইন ধরে হাঁটবো বলে। 
 
এ এক আজব রেললাইন যার ওপর দিয়ে দিন-দিন হাজারো জনের পা পড়ে অথচ কেউ কাউকেই মনে রাখেনি কোনদিন। আর সব যারা এতদিন এপাড়-ওপাড় করেছে এ পথ তারাও হয়তো আমাকে/আমাদের দেখে ভ্রুকুটি ছুঁড়ে বাতাসে, বিস্মৃতজন হয়ে যাবো বলে তারা হয়তো জানেনই না আর সব থেকে আমি আজ আলাদা হয়েছি আমার অন্তঃজজনকে সাথে নিয়ে এসেছি বলে। আমার সাথে থাকাজন কী তা জানে? আমি জানিনা!
 
আকাশ ভেঙ্গে আজ রোদ নেমেছে রেললাইনের ওপরে। সাথে থাকা বালুময় মাটি চিক চিক করে শুঁষে নিয়ে রেখেছে সুর্যের সমূহ আলো। তাই ওপর থেকে যতটা না গরমে অতিষ্ট হয় আর বাকি সব ক্লান্ত পথিক তাদের ক্লান্তির পালে আরো জোরে হাওয়া লাগায় নিচের মাটি। আমি তাকে নিয়ে পথে নামলে আর সবার চোখে আমিও হয়ে যাই পথিককুলের কোন একজন। কিন্তু আমার বিশ্বাসে থেকে যায় আর কিছু। রেললাইন আমাকে আর সব থেকে আলাদা করে রেখেছে তাকে সাথে নিয়ে এসেছি বলে।
 
রাস্তার পাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা কোন এক গাছের নীচে বসেছে এক বৃদ্ধা সামান্যতম হলেও বিশ্রাম নেবে বলে। তার ক্লান্ত মুখ স্বাক্ষ্য দেয় আর অনেকটা পথ পাড়ি দেবার অপেক্ষায় আছে সে। ঝিঁ ঝিঁ বাতাসে মাখিয়ে নিচ্ছে পূরো অবসন্ন শরীর। 
 
আমি ক্লান্তিহীন হয়ে পড়েছি আগ থেকেই। তুখোড় রোদ্ধূরেও সামান্য বাতাস বইলেও আমার বাতাস বইছে অন্য কোথা থেকে। তোমার ধরে থাকা হাত থেকে.

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।