সম্পাদক পরিষদ (Editors Council) নামে গঠিত হলো পত্রিকা সিণ্ডিকেট!

26/05/2013 02:02

পত্রিকা সম্পাদক সিণ্ডিকেট দৃশ্যমান হলো। ১৬ সম্পাদক কর্তৃক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করার পর এই দাবি বিভিন্ন মহলে বিতর্কিত হলেও তারা এবার অন্য পথে গিয়ে "সম্পাদক পরিষদ (Editors Council)" গঠন করেছেন। মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জোরালো দাবি জানাবার পর পরই তাদের এই " সম্পাদক পরিষদ" গঠন যে উদ্দেশ্যমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা হয়েছে, সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন, সাংবাদিকতার পেশাগত মানোন্নয়ন ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য। কিন্তু পরিষদ গঠন হলেও এর কোন গঠনতন্ত্র এখনো করা হয় নি বলে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তার কারণ আছে বৈকি!


"সম্পাদক পরিষদ (Editors Council)" বলে যা গঠিত হয়েছে তার সদস্য সংখ্যা আপাত ১৯। যার মধ্যে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি জানানো সম্পাদক রয়েছেন ১৪ জনই! শুধুমাত্র বাদ পড়লেন যুগান্তরের নির্বাহি সম্পাদক সাইফুল আলম। এই পরিষদে স্থান হয়েছে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির বিবৃতি সাক্ষর না করা আনোয়ার হোসেন (ইত্তেফাক) এবং শ্যামল দত্ত (ভোরের কাগজ)। বাকি ৩ জন স্থান পেলেন ঢাকার বাইরের পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে!

হঠাত করে মাহমুদুর রহমান প্রেম এবং মুক্তি দাবি জানাবার পর পরই তড়িঘড়ি করে এমন "সম্পাদক পরিষদ (Editors Council)" গঠন প্রশ্নের জন্ম দেয়। কারণ তাদের ঘোষিত  তিন লক্ষ্য সম্বলিত এই পরিষদ' বলা হলেও গঠনতন্ত্র ছাড়াই শুরু করা হয় মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি জানাবার পরই যখন বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র বিরোধিতা এবং সমালোচনার সম্মুখিন হয়! সেই হিসেবে তাহলে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক!

"সম্পাদক পরিষদ (Editors Council)" সভাপতি গোলাম সারওয়ার ( সমকাল), সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম (ডেইলি স্টার) ও কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী (মানবজমিন)। সদস্য হলেন : মাহবুবুল আলম (ইনডিপেন্ডেন্ট), আনোয়ার হোসেন (ইত্তেফাক), মতিউর রহমান (প্রথম আলো), রিয়াজউদ্দিন আহমেদ (নিউজ টুডে), এএমএম বাহাউদ্দীন (ইনকিলাব), এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন (ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস), নুরুল কবির (নিউ এজ), শ্যামল দত্ত (ভোরের কাগজ), ইমদাদুল হক মিলন (কালের কণ্ঠ), নঈম নিজাম (বাংলাদেশ প্রতিদিন), খন্দকার মুনীরুজ্জামান (সংবাদ), আলমগীর মহিউদ্দিন (নয়া দিগন্ত), মোস্তফা কামাল মজুমদার (নিউ নেশন), মোজাম্মেল হক (করতোয়া), এম এ মালেক (আজাদী) ও স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী (পূর্বকোণ)।

আর মাহমুদুর রহমানপ্রেমী বিবৃতিদাতা হলেন: মাহবুবুল আলম (ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট), গোলাম সারওয়ার (সমকাল), মতিউর রহমান (প্রথম আলো), মাহফুজ আনাম (ডেইলি স্টার), রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (ডেইলি টুডে), ইমদাদুল হক মিলন (কালের কণ্ঠ), খন্দকার মুনীরুজ্জামান (সংবাদ), মতিউর রহমান চৌধুরী (মানবজমিন), নুরুল কবির (নিউ এজ), এএমএম বাহাউদ্দীন (ইনকিলাব), আলমগীর মহিউদ্দিন (নয়া দিগন্ত), এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন (ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস), নঈম নিজাম (বাংলাদেশ প্রতিদিন), মোস্তফা কামাল মজুমদার (নিউ নেশন), সাইফুল আলম (যুগান্তর) এবং আলমগীর হোসেন (বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)।
 

মাহমুদুর রহমানের মুক্তি এবং আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশের দাবি জানানো সম্পাদকগণ নিজেরা পেশাগত দায়িত্ব ভুলে গিয়ে পেশাদারিত্বের দোহাই দিয়েছেন। তাদের ভাষায়- 'দৈনিক আমার দেশের প্রেসে তালা দিয়ে পত্রিকা ছাপা বন্ধ করা, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের অভিযোগ, বিকল্প ব্যবস্থায় ছাপতে না দিয়ে আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।' তাঁরা বলেন, 'দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আইসিটি মামলায় গ্রেপ্তার করে পত্রিকার প্রেসে তালা লাগানো এবং কোনো কারণ না দেখিয়ে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অনেক সাংবাদিককে বেকারত্বের অন্ধকারে নিক্ষেপ করা কোনো নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকারের ভাবমূর্তির পক্ষে অনুকূল নয়।' কিন্তু তারা ভুলেও খেয়াল করেন নি যে বাংলাদেশে গত কয়েক মাসের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং অস্থিরতা সৃষ্টি মূলে ছিল আমার দেশ পত্রিকা এবং মাহমুদুর রহমান। শাহবাগ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সর্বপ্রথম এই পত্রিকাই শিরোনাম করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে- ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি: গৃহযুদ্ধের উস্কানি’। ‘ভয়ংকর ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্র’ শিরোনামে কয়েকটি রিপোর্ট করে আমার দেশ এবং মাহমুদুর রহমান সাধারণ ব্লগারদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ফলে কয়েকজন ব্লগার আক্রান্ত হয়েছে, একজনকে ইতোমধ্যেই খুন করে ফেলেছে একটি চক্র এবং অনেকেই আছেন হুমকির মুখে। কাবা শরীফের ইমামদের নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে সাপ্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেবার চেষ্টা সহ কোন কিছুই বাকি রাখে নি আমার দেশ পত্রিকাটি। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ছিল অনিবার্য কিন্তু সরকার সময়মত কোন পদক্ষেপ না নেয়ার আমাদের সামনে এক সময় ফ্রাঙ্কেস্টাইনের দানবের মত আবির্ভূত হয়েছিল উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠী। তাদের দমন এবং উস্কানিদাতার মূলোৎপাটন যা ছিল সময়ের দাবি। দেরিতে হলেও মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হয়েছে এবং আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা সিলগালা করা হয়েছে সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে। জনদাবির বাস্তব রূপায়ন কিভাবে বিরোধিতা করে সুশীল এই সম্পাদক গোষ্ঠী?

সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি এবং আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেবার অদ্ভুত দাবি জানানো সম্পাদকগণ নিজেরাই সাংবাদিকতার মুল আদর্শকে কলঙ্কিত করেছেন। এক মাহমুদুর রহমানের অপরাধের বিরোধিতা না করে তার পক্ষাবলম্বন করে তারা নিজেরাই এই অপরাধের অংশীদার হয়েছেন। এখন এই অপরাধকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বিভিন্ন পর্যায়ের দৌড়ঝাঁপ এবং সর্বশেষ "সম্পাদক পরিষদ (Editors Council)"গঠন তাদের উদ্দেশ্যমূলক কার্যকলাপের ইঙ্গিত দেয়। যদিও তারা বলছেন-সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন, সাংবাদিকতার পেশাগত মানোন্নয়ন ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য। কিন্তু ইতোমধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে তারা যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে বাঁচার মিশনকে দেখছেন সেক্ষেত্রে স্বভাবত আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছি না। আমরা মনে করি কোন সুস্থ এবং প্রকৃত সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য কোনক্রমেই সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং উস্কানিদাতাদের রক্ষা করা নয়।

১/১১ পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে কিছু কিছু সম্পাদক অতি উৎসাহী হয়ে উস্কানি দিচ্ছিলেন বিভিন্নভাবে। সে সময় তারা তেমনভাবে সংঘবদ্ধ ছিলেন না বলে অনেক কিছুই সম্ভব হয় নি। কিন্তু এবার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে এবং জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি জোরালোভাবে উঠেছে তখন বিএনপি নিজেরাই জামায়াত-শিবিরকে বাঁচাবার মিশনে আছে। সেই সাথে আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিষয়ে  রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হবার আশংকাসহ  অন্যান্য বিষয় তখন গত বারের সে সুযোগ তারা কি  নিতে চাইছে অন্যভাবে;সংঘবদ্ধ হয়ে? সাংবাদিক না হয়েও যিনি হুট করে সম্পাদক বলে দাবি করতেন সেই মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি জানানো যদি তাদের মিশনের প্রথম পদক্ষেপ হয়ে থাকে তবে পরের পদক্ষেপ কি হতে পারে তা নিয়ে আতংকিত হওয়া ছাড়া উপায় নাই!

সম্পাদক সিণ্ডিকেট গঠনের আগে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি, ১/১১ সৃষ্টির অপচেষ্টা এবং সিণ্ডিকেটের আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর যদি কর্মসূচিভিত্তিক  অনুরূপ দাবি জানানো হতেই থাকে তাহলে আমরা যাব কোথায়? এ আমরা কতভাবে অসহায়- এবার যদি শিক্ষিতেরা (!) এমনতর সিণ্ডিকেটে আমাদের ভাসাতেই থাকেন তবে আমাদের পালাবার কোন পথই আর অবশিষ্ট থাকে না!

Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।