লেখালেখি,কবিতায় আসক্তি-অনাসক্তি এবং কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতি

14/07/2012 18:00

 

কবিতায় মন বসে না আজকাল। কবিতা শুনে মনে হয় পালাই, পালাই! কেন এমন হয় জানি না। তবে আমি জীবনের অনেকটা ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছিলাম কবিতার জন্যে। কবিতার পেছনে এই সময়টা না দিয়ে যদি হালচাষেও নেমে যেতাম তাতে করে কয়েক বেলার ভাতের সংস্থান হতো এ নিয়ে সন্দেহ নাই।
 
মনে আছে ক্লাস ফোরে থাকাকালীন সময়ে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় একবার একটা আবৃত্তি করেছিলাম। আবৃত্তির এক পর্যায়ে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিলাম সামনে রাখা টেবিল। সবাই হাততালিতে ভরিয়ে দিয়েছিল স্কুল প্রাঙ্গন। এমনকি যারা মঞ্চে ছিলেন তারাও। আসলে ছড়া/কবিতার এই পার্টে আসলে এমন একটা অভিনয়ের প্রয়োজনও ছিলো। আমি না বুঝে করেছিলাম কিন্তু বাকীরা মনে করেছিল এটাই আসল অভিনয়। সে প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম পুরস্কার নিয়েছিলাম। হতে পারে সে থেকে কবিতাতেই আসক্তি।
 
বাড়িতে পত্রিকা রাখা হতো। মূল শহর থেকে আমাদের বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। কিন্তু পত্রিকা প্রাপ্তির জন্যে তা যথেষ্টই বিশেষ করে থানা সদর তখন বেশ দূরে। বাড়িতে তখনো গ্যাস সংযোগ আসেনি। তাই মোটামোটিভাবে অনুন্নত এলাকাই বলা যায়! সে হিসেবে পত্রিকা আসতো তিনটার দিকে। আমি মোটামোটিভাবে হাজিরই থাকতাম পত্রিকা নিয়ে আসার জন্যে। কারণ বাড়িতে আসতে আসতে পত্রিকা পড়া হতো। সে থেকে পত্রিকা পড়ার প্রতি আগ্রহ। সে আগ্রহ থেকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মে। আম্মা দিন-রাত কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওজিফা পড়তেন মুখস্তই। এটা শুনতে শুনতে বেশ কিছুটা মুখস্থই হয়ে যায়। এখন অবশ্য ভুলে গেছি। সন্ধ্যা হতেই আমাদের সব ভাই-বোনদের স্কুলের পাঠ্যবই পড়তে বস্তে হতো। এটা অবধারিতই! না হলে টিভি দেখা নিষেধ। তাই টিভি দেখার লোভে আমাদের দিনকার পড়া পড়তেই হতো। আম্মা টিভি দেখতে যাবার আগে সবার পড়ার ব্যাপারটা নিজেই যাচাই করতেন। আব্বা বাড়ি আসার পরে সবাইকে বিভিন্ন কবিতা বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। এ কারনেই কবিতার প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিলো। আর পুলিশে চাকুরি করা বড় চাচা বাড়ি আসলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। তাই তার সামনে লজ্জ্বা পাবার ভয় এবং ভালো ছেলে হিসেবে হিসেবে প্রমাণের জন্যে আমাদের ভাই-বোনদের অনেক অনেক বেশি প্রতিযোগিতা করে পড়তে হতো।
 
পত্রিকা পড়ার সুবাদে রাজনীতি বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি। এক সময় বাড়ির সবাইকে না জানিয়ে পত্রিকায় চিঠি পাঠানো শুরু করে দিয়েছিলাম। এক সময় ছাপা হলে প্রথমেই চোখ পড়ে আমার চাচাতো ভাইয়ের। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন আমি পত্রিকায় কিছু পাঠিয়েছিলাম কী-না! আমি সরাসরি বলে উঠলাম নাহ কিছুই পাঠাইনি। এ উত্তর ছিলো আসলে ভয়ে। কিন্তু পরক্ষণে তিনি আমাকে দিনের পত্রিকা বের করে দিয়ে দেখালেন এটা কার? আমি কিছু বলিনি তখন। থ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর তিনি যখন বললেন গুড! তখন আমি মনে কিছুটা ভরসা পাই। সামান্য পরেই আব্বার কাছে একই জিজ্ঞাসা। আমি কিছু বলার আগেই আমাকে ভরসা দিলেন। পরেরদিনই গ্রামের দূর সম্পর্কের এক দাদা আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে প্রশংসা করলেন। সেই চিঠি লেখার পাঠে কিছুটা আত্মবিশ্বাস পেলাম।
 
তারপর দিন যায়, দিন আসে। আমি পাঠাই পত্রিকা ছাপে। কোন একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে রাজনোইতিক একটা লেখা বাংলাবাজার পত্রিকার একেবারে উপ-সম্পাদকীয় পাতায় ছাপিয়ে দেয়। আমি দ্বিগুণ আগ্রহ পাই। তার পরের সপ্তাহে আরেকতা লেখা পাঠাই। সেটাও উপ-সম্পাদকীয় পাতায় এবং পরিচিতিতে লেখে কলাম লেখক। তারপর নিয়মিতভাবে লিখে যাই সে পত্রিকায় প্রতি পনের দিনের শুক্রবারে একবার ছাপে কলাম লেখক হিসেবে।ইতোব্যসরে টুকটুক ছড়ার মত লেখা লিখতে শুরু করি। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রকাশ পায়। প্রতি সপ্তাহের কোন না কোন দিন আমার ঠিকানায় বিভিন্ন ম্যাগাজিন আসতে শুরু করে। আগ্রহ বাড়ে; আগ্রহ বেড়ে যায়! দমাতে পারিনা না নিজেকে। পড়ে যাই মোহে। যার শুরু হয়েছিলো কোন এক পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে আর শেষটা কোথায় তার হদিস পাচ্ছিনা।
 
তবে ইদানিং কেমন জানি ভালো লাগেনা কবিতার কিছু। নিজের লেখা কবিতা ভালো লাগছে না আজকাল। পড়তে ভালো লাগছে অন্যের লেখা যে কোন কিছুই ভালো লাগছে ভালোভাবেই। মনে হচ্ছে কবিতায় আমার বেইল নাই! আমাকে দিয়ে কবিতা হবেনা। তবে তারপরেও মনে পড়ছে এই কবিতা নিয়ে বেশ কিছু স্মৃতি! পড়তে বসার সময়ে চুরি করে কবিতা/ছড়ার লাইনের পর লাইন লিখেছিলাম। এমনকি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমি কবিতা নিয়ে ভেবেছি। শুধুমাত্র মার্স্টার্স পরীক্ষার সময়ে আমি একজনকে উদ্দেশ করে পনেরটির মতো একটি কবিতা সিরিজ লিখে ফেলেছিলাম। এ কবিতাগুলো আমি কোথাও প্রকাশ করিনি। মাঝে মাঝে পড়ি আর অবাক হই। যে কবিতা র শিরোনাম ছিলো সুপর্ণা! এ নামে একটা মেয়ে ছিল আমাদের পরীক্ষা হলে। ও মেয়েকে আমি জীবনে কোনদিনও দেখিনি। সুন্দরী বলতে যা বুঝায় তা ছিলো না।কিন্তু কেমন করে যে আমার কাছে কবিতা হয়ে উঠলো আমি ভেবে অবাক হই। সরাসরি কোন একজন যে আমার কোন কবিতায় স্বনামে কোন চরিত্র হয়ে উঠলো তা অবাক করার মতোই ব্যাপার!
Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।