গণজাগরণ মঞ্চ: সিলেট প্রেক্ষিত

10/02/2013 01:54

গণজাগরণ মঞ্চ: সিলেট প্রেক্ষিত- কবির য়াহমদ

 

সারা দেশ অভিন্ন দাবিতে একাট্টা হয়ে আছে- যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি আর জামাত-শিবির চক্রের নিষিদ্ধ করার দাবিতে। এমন অভূতপূর্ব গণজাগরণ ছিল ধারণার বাইরে কিন্তু আমাদের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাঙালী জাতি সময়ে সময়ে যখন জেগে ওঠে তখনই তার ফল ঘরে নিয়েই তবে ঘরে ফেরে। এটা অতি আবেগিকথন নয় বাস্তবতা থেকেই নেয়া।

অনেককেই বলতে দেখা যায় বাঙালীর জাগরণ কালের সময় পার্থক্য দু দশক। দুই দশক সময়কাল পর পর তারা জেগে ওঠে তুমুল বিক্রমে। বায়ান্ন, একাত্তর, নব্বই, তেরো- এই জাগরণের বছরওয়ারি হিসাব। প্রশ্ন তবে এর বাইরে কি জেগে ওঠেনি বাঙালী জাতি? হ্যাঁ, অতি অবশ্যই জেগেছে কিন্তু ফল আসতে সময় নিয়েছে দুই দশক সময়কাল। বায়ান্নতে বাংলাকে মাতৃভাষা প্রতিষ্টার দাবিতে আন্দোলন, উনষত্তর-একাত্তরে গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা, নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর এবার রাজাকারমুক্ত বাংলার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে আমরা কখনোই ব্যর্থ হইনি। ইতিহাসের এ অধ্যায়ের দিকে তাকালে দেখা যায় আমাদের ব্যর্থতা নাই তাই সফল হবোই!

সারা দেশ কাঁপানো প্রজন্ম আন্দোলন ২০১৩ শুরু হয়নি কোন রাজনৈতিক নেতানেত্রীর হাত ধরে। কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে এক প্রবল রাজনৈতিক চেতনা যা দেশকে ধারণ করে। অরাজনৈতিক মানুষের দেশপ্রেম, রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা দিয়ে এই আন্দোলন হুট করে রাস্তায় নেমে আসেনি। এর আগে বছরের পর বছর ধরে সাইবার বিশ্বে এ নিয়ে তুমুল আন্দোলন চলছে। অনলাইন বিশেষ করে ব্লগে এ নিয়ে অনেক আগে থেকেই লেখালেখি চলছে। অনেকেই করে চলছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা। এই লেখালেখি-গবেষণা করছে তারা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিন্তু অন্তরে ধারণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যার বীজ বপন করেছিলেন একজন জাহানারা ইমাম।

জাহানারা ইমাম নিজে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তিনি ছিলেন নির্দলীয় রাজনীতি সচেতন এক ব্যক্তিত্ব। ১৯৯২ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি দল জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমকে তাদের আমীর নিয়োগ দেয় তখনই তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এক প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তুলেন। তাঁর এই আন্দোলনে যারা সহযাত্রী ছিলেন তাদের সবাইই ছিলেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিনি গণআদালত গঠন করেন এবং এই গণআদালতের রায়ে গোলাম আযমসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির আদেশ দেন এবং প্রতীকী ফাঁসি দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধিদের। জাহানারা ইমামের এই গণআদালত এবং ফাঁসির রায় যদিও ছিল প্রতীকী এক আয়োজন তবুও এই আন্দোলন এবং রায় সাড়া পড়ে সমাজের সর্বত্র। প্রবল বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ থাকায় সে আন্দোলন আর এগুতে পারেনি এবং বিচারের মুখোমুখি হয়নি যুদ্ধাপরাধীরা।

দুঃখের বিষয় জাহানারা ইমামের এই আন্দোলন আর বেশিদুর এগুতে পারেনি বৈরি সরকারের কারণে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারি দলগুলো প্রথমে এগিয়ে এলেও সময়ে সময়ে তারা সরে যায় এই আন্দোলন থেকে। তাই বাইরে থেকে তাঁকে আঘাত করার লোকের অভাব ছিল না। তৎকালীন বিএনপি সরকার জাহানারা ইমামসহ গণআদালতের ২৪জন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে। জাহানারা ইমাম এই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা মাথায় নিয়েই মৃত্যুবরণ করেন। রাজনৈতিক সহযোগিতা না থাকায় যেখানে শুরু সেখানেই শেষ হয়ে যায় এই আন্দোলন। তবু এর রেশ যে থেকে যায় সবখানে তাঁর প্রমাণ এই প্রজন্ম ২০১৩’র আন্দোলন। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে তবু বলা যায় এর বীজ প্রোথিত ছিল জাহানারা ইমামের সেই আন্দোলন থেকে। বাংলাদেশের মানুষের না পাওয়ার হতাশা আর বার বার স্বপ্নভঙ্গের যে ক্ষরণ তা প্রকাশ হয়েছে এই প্রজন্ম আন্দোলনের মাধ্যমেই।

প্রজন্ম ২০১৩’র এই আন্দোলনের শুরু হয় কসাই কাদেরর রায়ের পর থেকে।  গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদেরের ওরফে কাদের মোল্লা’র বিরুদ্ধে আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবার পরও তার শাস্তি দেয়া হয় যাবজ্জীবন। এটা অবিশ্বাস্য এবং অকল্পনীয় ছিল দেশবাসীর কাছে। এই রায় হতাশার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়- কসাই কাদের নামে যে লোকটিকে চেনে দেশবাসী তার শাস্তি কিভাবে হয় মোটে যাবজ্জীবন।  তাহলে কত লোককে হত্যা করলে ফাঁসির আদেশ হয়? কত মা-বোনকে অসম্মান করলে শাস্তি হয় মৃত্যুদণ্ড? এভাবেই শুরু এ আন্দোলন চেতনা থেকে, কারণ নতুন প্রজন্ম মনে করেছে সুবিচার হয়নি এবং হয়ত ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এগুচ্ছে কেউ রাজনৈতিকভাবে। সে থেকে শুরু! ঢাকার শাহবাগে রাস্তায় নেমে আসে কয়েকজন অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ব্লগার। তারা হাতে হাত ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায় এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। আস্তে আস্তে এক সময়ে কয়েকজন মানুষের এই লাইন হয়ে যায় হাজার মানুষে। হাজার থেকে লক্ষ। ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র!

কেতাবের ভাষায় লিখা ছিল লঘু পাপে গুরু দণ্ডের কথা অথবা কি নির্লজ্জভাবে প্রত্যক্ষ করা হল গুরু পাপের লঘু দণ্ডের নিকাশ! তবে কি জীবনের কোন মূল্য ছিল না মিরপুরবাসীর যারা কাদের মোল্লার হাতে প্রাণ হারিয়েছে, তবে কি কোন সভ্রমের কোন মূল্য ছিল না যারা অসম্মানিত হয়েছিল কাদের মোল্লার হাতে?

কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হবার পর সবাই অনুধাবন করতে পারে এ নিছক এক মস্করা হয়েছে জনমানুষের সাথে, প্রতারণা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এবং  সম্ভ্রম হারানো আমাদের আত্মজাদের সাথে। তাই আমরা যারা অনলাইন এক্টিভিস্ট-ব্লগার এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মনে-প্রাণে ধারণ করি তারা বসে থাকতে পারিনি। আমাদের চেতনার ডাকে আমরা সাড়া দিয়েছি স্ব স্ব অবস্থান থেকে। এখানে আমাদের কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং পরিচয় নেই- খুব সরল-সহজ অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নতুন প্রজন্ম। তারা একাত্ম হয়ে সিদ্ধান্ত নিই আমাদের কিছু একটা করতেই হবে। সেই হিসেবে রাতে ফেসবুকেই গ্রুপ মেসেজে পরস্পরের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিই আমরা রাস্তায় নামব। কেউ যদি আমাদের সাথে না-ও আসে তবুও আমাদের ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানিয়ে উচ্চকণ্ঠে বলব আমরা যুদ্ধাপরাধী ঘাতক কসাই কাদের ওরফে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মানি না এবং আদালতে প্রমাণিত রায়ে তার একটাই শাস্তি হওয়া উচিত- মৃত্যুদণ্ড, মৃত্যুদণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ড! আমাদের বিক্ষুদ্ধকালীন সময়ে জানা যায় শাহবাগে রাস্তায় নেমেছে মানুষ প্রতিবাদে। আমরাও সিদ্ধান্ত নিই রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ জানাবার।  

আমরা (কবির য়াহমদ, হয্রত বিনয় ভদ্র, দেবাশীষ দেবু, একুশ তাপাদার, রাজীব রাসেল, অসীম দাস,পাপলু বাঙালী, আব্দুল বাতিন, সৈয়দ রাসেল, দলছুট শুভ, ন. নাজিম) ফেসবুকে গ্রুপ মেসেজে আলোচনা করি করণীয় সম্পর্কে। সেই রাতেই ইভেন্ট প্রস্তুত হয়ে যায়। আমাদের সবাই স্ব স্ব অবস্থান থেকে মানুষদের জানাবার দায়িত্ব নিয়ে নিই। যারা এই গ্রুপ আলোচনায় ছিলেন তাদের সবাইই অনলাইন এক্টিভিস্ট-ব্লগার, সংবাদকর্মী এবং নাট্যজন। আমরা সিদ্ধান্ত নিই আমরা আমাদের এই প্রোগ্রামকে অনলাইন এবং অফলাইন সবক্ষেত্রেই ছড়িয়ে দেব নিজেরা নিজেদের পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে এই প্রোগ্রামের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে।

রায় ঘোষণার পরের দিন আমাদের একটি টিম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি)তে। সেখানে আমরা কথা বলি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শাবি শিক্ষক সমিতি, চোখ ফিল্ম সোসাইটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শাবি শাখা এবং শাবি’র সর্বস্তরের শিক্ষক এবং ছাত্রদের সাথে। আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে শাবি’র ছাত্র-শিক্ষকেরা তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির পরিবর্তন এনে আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। আমাদের অন্যান্য টিমগুলো এম.সি কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী কলেজ, মদনমোহন কলেজ, নর্থ-ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ, রাগিব-রাবেয়া কলেজ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজসহ সিলেটের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে থাকে। সবাই একাত্ম হয় যে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া রায় হতাশাজনক এবং মেনে নেবার মত না। তাই তারা সবাই নিজেদের মধ্যে সংঘঠিত হয়ে আমাদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণে সাড়া দেয়।

আমরা সিলেটের সর্বস্তরের নাট্য এবং সংস্কৃতিকর্মী ও গ্রুপদের আমন্ত্রণ জানাই যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদের ওরফে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নামতে। আমাদের আমন্ত্রণে সবাই একবাক্যে নিজেরাও নেমে পড়ে প্রচার-প্রচারণায়। ফোনে-ফেসবুকে-ইমেলে-মেসেজের মাধ্যমে একে অন্যকে জানাতে থাকে প্রতিবাদী অবস্থানের কথা। সিদ্ধান্ত নিই আমাদের এই প্রোগ্রাম যেহেতু জনমানুষের কথা বলছে, মানুষের মনের দাবিকে প্রতিনিধিত্ব করছে যেহেতু এই প্রোগ্রাম এবং প্রতিবাদ কর্মসুচি সেহেতু এখানে কোন ধরণের ব্যানার যা কোন না কোন সংগঠনকে প্রতিনিধিত্ব করে তা করব না। এই আয়োজন হবে সর্বস্তরের জনসাধারণ যেখানে আছেন ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী, সংস্কৃতি নাট্যকর্মীগণ এবং সাধারণ মানুষ। তাই খুব প্রথম থেকেই সচেতন থাকা যাতে করে জনসাধারণ নিজেদের প্রতিবাদটুকু জানাতে পারে অবলীলায়।

রায় ঘোষণার পরের দিন আমরা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই আয়োজন করি। সময় নির্ধারণ করি বিকেল চারটা। কিন্তু চারটা বাজার আগে থেকেই লোকে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো শহীদ মিনার এবং তার আশপাশকার রাস্তাগুলো। মনে হচ্ছিল যেন সিলেটের সবগুলো রাস্তা এসে শেষ হচ্ছে শহীদ মিনারে। এই প্রতিবাদী অবস্থান এবং প্রতিবাদের গানের সাথে চলে মুহুর্মুহু শ্লোগান যা কসাই কাদের ওরফে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নয় ফাঁসির দাবিতে। সেই সাথে বাকিসব যুদ্ধাপরাধীদের যাদের রায় এখনো আসেনি তাদের ফাঁসির দাবিতে।

সিলেটের ইতিহাসে একটানা এমন দীর্ঘদিনের আন্দোলন কখনোই হয়নি। এটা সম্ভব হয়েছে সিলেটবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার কারণে। এটা সম্ভব হয়েছে সর্বস্তরের ছাত্র-শিক্ষক, সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীদের কারণেই। এই আন্দোলনে কেউ নেতা হতে আসেনি। কাউকে নেতা বানানো হয়নি বলে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। তাই একটানা আন্দোলনে কেউ বিরক্ত হয়নি বরং দ্বিগুণ উৎসাহে আবারো রাস্তায় নেমে শ্লোগান, গণসংগীতে মাতিয়ে রেখেছে পরিবেশ।

যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা (কসাই কাদের) আন্তর্যাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কর্তৃক ছয়টি জঘন্য অপরাধের মধ্যে পাঁচটি অপরাধে দোষী প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই বিচারের রায়ে দেখা গেল তার ফাঁসির আদেশ হয়নি। একেকটা অপরাধের জন্যে তাকে অন্তত একবার করে ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত। সেই হিসেবে পাঁচবার তার ফাঁসি হওয়া উচিত। কিন্তু ফাঁসির আদেশ না হবার কারণে পুরো বাংলাদেশের জনগণ দিকে দিকে ফুসে ওঠেছে। আজ সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা, রংপুরসহ দেশের সব জায়গায় এক এবং অভিন্ন প্রতিবাদ আর দাবি-কাদের মোল্লার ফাঁসি আর জামাত-শিবির নিষিদ্ধকরণ।

কয়েকদিন আগেও খুব হতাশ ছিলাম জনমানুষ নিয়ে। মনে হচ্ছিল এই দেশে আবার ৭১'র মত কোন কিছু হলে অনেকেই নাম লিখাতো দেশবিরোধীদের খাতায়। আজ কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের পর আমাদের ভুল ভাঙল। আজ মনে হয়েছে এই দেশের মানুষ ফুরিয়ে যায়নি, এখনো ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা দেখাতে জানে। এখনো যুদ্ধাপরাধীদের কঠিন শাস্তির দাবি করতে মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে জানে। আমাদের আজ পেছনে তাকাবার সুযোগ নেই। আমরা এখনো উচ্চ আদালতে এই রায়ের রিভিউয়ের মাধ্যমে এখনো ফাঁসি দাবি করি। এখন দাবি করি বাকি সব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। সারা দেশ আজ একাট্টা অভিন্ন দাবিতে- ফাঁসি, ফাঁসি এবং ফাঁসি আর জামাত-শিবির নিষিদ্ধকরণ! কেউ যদি এখানে ভিন্ন কিছু নিয়ে হাজির হয়, কেউ যদি এখানে তাদের কূটকৌশল নিয়ে হাজির হয় তবে তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এই বাংলাদেশ হবে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত একটা নির্মল বাংলাদেশ। যারা বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে নোংরা রাজনীতিতে জড়াতে চায় তাদের প্রতি চরম হুশিয়ারি- মুক্তিযুদ্ধ কারো একার সম্পত্তি না। এটা বাংলাদেশের মানুষের। "জয় বাংলা" শ্লোগান কারো সম্পত্তি না- এটা বাংলাদেশের মানুষের।

দেশ জেগেছে আজ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি আর জামাত-শিবির নিষিদ্ধকরণের দাবিতে। অভিন্ন দাবি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি আর জামাত-শিবির নিষিদ্ধকরণ- এর বাইরে আর কোন দাবি নাই। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণেরা নিজেদের উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে তাদের রুখতে সাধ্য করা?

সিলেটের মানুষ শুধুই কেন পুরো দেশ আগে এভাবে দেখেনি এমন আন্দোলন যা কি-না কোন রাজনৈতিক ব্যানার ছাড়াই জনমানুষের সমর্থনে এগিয়ে গেছে। অভূতপূর্ব এ আন্দোলন অরাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকে শুরু হলেও আসলে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যা কি-না সুন্দর এক বাংলাদেশ গঠনের ইঙ্গিত দেয়। আমরা খুব করে আশাবাদী এই দেশ যখন জেগেছে এবং তার সর্বোত সমর্থন দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ’র প্রতি তখন রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করবেই! 

'লাখো শহীদ ডাক পাঠালো, সব সাথীরে খবর দে

 সারা বাংলা ঘেরাও করে রাজাকারের কবর দে''


 

Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।