একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২ ডায়েরি-৪: বিনোদনও আছে, বিনোদন

14/07/2012 17:00

 

শুক্রবার যেখানে ছিল না তিল ধারণের ঠাই শনিবার ঠিক তার উল্টো। ম্যাড়ম্যাড়ে এক রসকষহীন বিকেল কেটেছে বইমেলায় আগতদের। এভাবে কেউ ভাবেনি যে দুই ছুটির দিনে দুই রকম চিত্র দেখবে বইমেলা চত্ত্বর। যাদের একবার বইমেলায় ঢুঁ না মারলে কোন কিছুই হজম হয়না তারা ছাড়া আর কাউকে হয়তো দেখা যায়নি সে মেলায়। সাধারণ মেলাপ্রেমী (বইপ্রেমী নয়) যারা এসেছিল তাদের অনেকেরই খালি হাতে এদিক ওদিক ঘুরে থাকতে দেখা গেছে বিকেলের পুরোটা সময়। কেউ মেতেছিল আড্ডায়। কেউ কেউ বই নাড়াচাড়া আর কারো কারো হাতে গুটি কতেক বই। বই হাতে লোকের সংখ্যা সংখ্যার দিক থেকে খুব একটা বেশী যে নয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
মেলার একটা মজার বিষয় হলো টিভি চ্যানেলগুলোর ক্যামেরার ঘুরাঘুরি। এত এত টিভি চ্যানেল আর ক্যামেরা। দেখলে মনে হয় দুধভাত। লেখক পাঠক সমানে দিয়ে চলছে সাক্ষাৎকার। চ্যানেলগুলোর এই সাক্ষাতকারের আতিশয্য আর ছিরি দেখে মনে হতে পারে আজকালকার টিভি দর্শক এই সাক্ষাৎকারের সময়ে রিমোর্টের যথাযথ ব্যবহার করলেও করে ফেলতে পারেন! টিভি সেটের সামনের দর্শকের ভূমিকা যাই থাকুক না কেন বইমেলা চত্ত্বরে যখন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাগুলো ঘুরছিল তখন ক্যামেরার পেছন পেছন কিছু অতিউৎসাহী পাবলিকের ছুটাছুটিও লক্ষ্য করা যায়। আলাদীনের চেরাগের মতো হা করে তাকিয়ে থাকে তারা ক্যামেরার পানে। আর কেউ যদি সাক্ষাৎকার দিতে আসে তাহলে সেখানে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে উৎসাহী দর্শকের একাংশ। তাদের অবাক দৃষ্টি বলে দেয় নিশ্চয়ই পৃথিবীর “নবম আশ্চর্যের” একটি হল এই টিভি ক্যামেরা।
সাধারণ দর্শকের এই ক্যামেরা প্রীতির কথাই শুধু বলা হলে আসলে একটা বিশেষ শ্রেণীর প্রতি অবিচার করা হবে। সে শ্রেণী হল লেখক শ্রেণী। অনেককেই দেখা যায় ক্যামেরাম্যান অথবা প্রতিবেদকের আশপাশে ঘুরঘুর করতে। তাদের বাচনভঙ্গি আর হাতে একাধিক বইয়ের উপস্থিতি বলে দেয় তারা লেখক। এই লেখকেরাও চান তাদের বইয়ের বহুল প্রচার এবং ক্যামেরার সামনে নিজের উপস্থিতি। বইয়ের প্রচারের বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি কিন্তু এমন করে ক্যামেরা আর ক্যামেরাম্যানের দৃষ্টি আকর্ষন সাধারণ চোখে খুব একটা সুন্দর দেখায় না। যাদের ক্যামেরার সামনে আসা হয়ে যায় তাদের অনেককেই তৃপ্তির হাসি নিয়ে চলে যেতে দেখেছি এবং অনেকেই সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে জানতে চেয়েছে এই অনুষ্ঠান প্রচার হবে কবে! এটা খুব মজার একটা দৃশ্য। সামনে থেকে দেখে নিলে অনেক কিছু পাওয়ার বিষয় কিন্তু না দেখলে অবশ্য হারাবারও কিছু থেকে যায় না।
টিভি চ্যানেলের সাথে লেখকদের সাক্ষাৎকার এবং অতিউতসাহীদের ঠেলাঠেলির বাইরে আরেকটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে একই সাথে একই চ্যানেলে দুইজন সাক্ষাৎকার দিতে আসলে তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে হালকা বাদানুবাদ লক্ষ্য করা যায়। তেমন এক ঘটনা সামনে ছিল সেদিন। ঢাবি’র একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আর একজন “বয়স্ক লেখক” সাক্ষাৎকার দেবার জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন একইসাথে। ক্যামেরা রেডি হচ্ছিল সেই সাথে রেডি হচ্ছিলেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক। তাদের নিজেদের দাঁড়ানো নিয়ে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু তারপরেও ঢাবি শিক্ষক সে লেখককে একটু সরে যেতে ঈশারা করলেন। ঈশারার কথা বললাম এ কারণে কারণ কথাগুলো শুনা যাচ্ছিল না। ঢাবি শিক্ষকের কথা শুনেননি সে লেখক। তিনি আরো বেশি শিক্ষকের দিকে এগিয়ে চলেন। শিক্ষক তার চেহারার মাঝে একটু বিরক্তি ফুটিয়ে তুললেন। ক্যামেরা রেডি হল রেডি হলেন প্রতিবেদক। একশনে ঢাবি শিক্ষক। তিনি তার স্বভাবভঙ্গিমায় অনেক কিছু বলে গেলেন বই সম্পর্কে। দূর থেকে কিছুই শুনা না গেলেও অতিউতসাহী দর্শকদের হাসিমুখ আর নিজের সন্তুষ্টি নিয়ে তিনি ফিরে গেলেন। মজার বিষয় সে শিক্ষক বিভিন্ন সময় চ্যানেলে কথার ফুলঝুরি ফুটিয়ে তুলেন। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে তিনি আলোচনার খোরাক হয়েছেন পজিটিভলি। সাক্ষাৎকারের সময়ে তাকে তার বইয়ের প্রদর্শনের জন্যে একহাতে নিজের বুকের কাছে কথা বলতে হয়েছিল। এটা হয়তো টিভি দেখাকালীন সময়ে বইয়ের প্রচারের জন্যে সহায়ক হতে পারে কিন্তু একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের এভাবে বইকে প্রদর্শন সরাসরি দেখলে কেমন দৃষ্টিকটু ঠেকে বৈকি!
লেখক-পাঠক আর দর্শকই নয় টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতিবেদকেরা অতিউতসাহীদের ভালোই বিনোদন যোগাচ্ছেন পুরো বইমেলা জুড়ে। কোন কোন টিভি প্রতিবেদককে ক্যামেরার সামনে যাবার আগে হালকা সাজগোজ করতে দেখা যায় বইমেলা প্রাঙ্গণে। সাজগোজের এই ব্যাপারটি অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে কিছু দর্শক। তাদের অনেকেরই চোখগুলো এমন বিস্ফোরিত হয়ে থাকে মনে হয় এমন অভাবনীয় দৃশ্য তারা দেখেনি আর আগে কোনদিনই! নায়ক নায়ক ভাব নিয়ে কারো কারো কাছে ঘেঁষা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে দেখা যায় মাঝে মধ্যে। তখন কেউ হয়তো যারা টিভি চ্যানেলের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা তাদের সরিয়ে দেয় কিন্তু সামান্য দুরত্ব রেখে আবারো দাঁড়িয়ে থাকে হা করে।
বইমেলা প্রানের মেলা। প্রাণের এই বইমেলায় শুধুমাত্র বইই বিক্রি হয় তা নয় অনেকে আবার বিনোদন দিয়ে যায় সমানে। কি লেখক, কি পাঠক, কি দর্শক আর কি টিভি চ্যানেল সংশ্লিষ্ট লোকজন সবাই আছে এই তালিকায়। তালিকাটা যে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে সেটাই একটা উল্লেখযোগ্য আশংকাজনক খবর!
Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।